হাইকোর্টে অস্বস্তির মাঝে আইনী স্বস্তি পেলেন মুকুল রায়
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সি ও বিচারপতি শুভাশিস দাশগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে সরশুনা ঘুষকান্ডে আগাম জামিন বিষয়ক মামলাটি উঠে। সেখানে ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় - 'আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অবধি এই মামলায় অভিযুক্ত মুকুল রায় আইনী রক্ষাকবচ পাবেন। সেইসাথে তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের তদন্তে পূর্ন সহযোগিতা করতে হবে মুকুল রায় কে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের তিনদিন আগে নোটিশ করে অবগত করতে হবে পুলিশ কে'।এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর। এদিন ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলে পুলিশের উপর - জানুয়ারি তে অভিযোগগ্রহণ হওয়ার পর কেন এতদিন পর সক্রিয়তা? অভিযোগগ্রহণের প্রায় সাত মাস পর পুলিশ এই মামলায় তৎপরতা দেখায়। এদিন রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এই মামলার শুনানিতে গরহাজির ছিলেন বলে প্রকাশ। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই মামলা ঘিরে টানটান উত্তেজনা দেখা যায়।ওইদিন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ মুকুল রায়ের রক্ষাকবচের মেয়াদ বৃদ্ধিতে স্থগিতাদেশ জারী করে দেয়। অর্থাৎ পুলিশ যখন তখন গ্রেপ্তার পর্যন্ত করতে পারতো।এরপর মুকুল রায়ের আইনজীবী মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির এজলাসে দরবার করেন। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি অবশ্য ব্যক্তিগত কারনে এই মামলা শুনতে চাননি। তারপরেই এই মামলার পুরাতন এজলাসে অর্থাৎ বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি ঘটে। সেখানে তদন্তে পূর্ন সহযোগিতার শর্তে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর অবধি রক্ষাকবচের মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে এই মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কে অভিযুক্ত মুকুল রায় কে নির্ধারিত জিজ্ঞাসাবাদের তিনদিন আগে নোটিশ জারী করে অবগত করতে হবে। সেইসাথে এই মামলায় পুলিশি তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে ডিভিশন বেঞ্চ। জানুয়ারি মাসে এফআইআর দাখিল হওয়ার পর সাতমাস কেন লাগলো মামলার তদন্তে সক্রিয় হতে? সেই প্রশ্নও উঠে এদিন এজলাসে। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি আছে। এই মামলায় অভিযুক্ত বাবান ঘোষ কে কে গ্রেপ্তারের পর কলকাতার বাবুঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়ের আরেক ঘনিষ্ঠ বলয়ে থাকা সাদ্দাম আলী কে।একসময় ধৃত বাবান ঘোষ কে জেরা করে নাম উঠে আসে সাদ্দাম আলীর। তাই সাদ্দাম আলী কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থাকে বাবুঘাট এলাকা থেকে। সরশুনা ঘুষকান্ডে দুজন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ায় চাপে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়। তিনি ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলায় আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছেন।বেহালার সরশুনা ঘুষকান্ডে মামলায় চরম অস্বস্তিতে বিজেপি নেতা মুকুল রায়। কলকাতা হাইকোর্টে বিজেপি নেতা মুকুল রায় সরশুনা ঘুষকান্ডে আগাম জামিনের আবেদন জানান। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ শিবিরে থাকা মজদুর ইউনিয়নের নেতা বাবান ঘোষ ও সাদ্দাম আলী । পুলিশি সুত্রে প্রকাশ, এই মামলায় বাবান ঘোষের পাশাপাশি নাম রয়েছে বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের। তাই গ্রেপ্তারির আশংকা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন মুকুল রায়। জানা গেছে, আর্থিক প্রতারণা (৪২০ ধারা) , এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (১২০ বি) এর জামিন অযোগ্য ধারা গুলি রয়েছে এফআইআর কপিতে।বেহালার সরশুনার বাসিন্দা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের তার অভিযোগে লিখেছেন - গড়িয়াহাটের বাসিন্দা তথা বিজেপির মজদুর ইউনিয়নের নেতা বাবান ঘোষ ২০১৫ সালে রেলের স্থায়ী কমিটির পদ পাইয়ে দেওয়ার নামে ৪৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। সেসময় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী ছিলেন সুরেশ প্রভু। কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে যোগাযোগ ভালো আছে বোঝানোর জন্য সংসদ ভবনে এই বাবান ঘোষ বেহালার সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় কে নিয়ে গিয়েছিল বলে দাবি। রেলমন্ত্রকের নানা কাগজপত্র নাকি দিয়েছিল অভিযুক্ত বাবান ঘোষ। এই কাগজপত্রের সততা জানতে পূর্ব রেলের সদর দপ্তর কলকাতার ফেয়ারলি প্লেসে গিয়েছিলেন অভিযোগকারী। আর সেখানেই জানতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। যদিও বাবান ঘোষ শিবিরের দাবি - 'সম্প্রতি টালিগঞ্জের একঝাঁক শিল্পীদের তৃনমূল থেকে বিজেপিতে নাম লেখানোর কাজে মুখ্য ভূমিকা নিয়ে ছিলেন বাবান ঘোষ। এই রাজনৈতিক শত্রুতা থেকেই জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু এবং গ্রেপ্তার সে'।প্রশ্ন উঠে ২০১৫ সালের বিষয়টি কেন প্রায় চার বছরের মাথায় তুললেন অভিযোগকারী এবং রেলের স্থায়ী কমিটিতে পদ পেতে কেন এত টাকা দিতেও গেলেন সেই বিষয়েও উঠেছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন ? এই মামলায় আজ ১৮ সেপ্টেম্বর অবধি মুকুল রায়ের রক্ষাকবচ বাড়লো। ১৬ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ।