উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে আন্দ্রোলন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষের অপসারণ চেয়ে আন্দোলন 


সংবাদদাতা, কলকাতা :


কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় বিবাদ চরম শিখরে। প্রজাতন্ত্র দিবসে ধরা পড়ল অন্য এক ছবি। উপাচার্য শংকর কুমার ঘোষ মাত্র ৪-৫ সহযোগীদের নিয়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের পতাকা উত্তোলন করলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিডিউল মাফিক প্রজাতন্ত্র দিবসের পতাকা উত্তোলনের সময় ছিল সকাল ৯ টা। উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ ৮.৩০ নাগাদ পতাকা উত্তোলন করলেন চুপচাপ। তার সঙ্গে ছিল হাতে গোনা চার থেকে পাঁচ জন। আধিকারিক এবং কর্মী সংগঠনের পক্ষ থেকে কেউই সেখানে উপস্থিত হয়নি। একমাত্র আর্টস বিভাগের ডিন তপন কুমার বিশ্বাস নিজের দুর্নীতিকে আড়াল করতে উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।

শঙ্কর কুমার ঘোষ একমাত্র অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র সরকারকে তার পাশে দাঁড় করিয়ে পতাকা উত্তোলন করলেন। 

ভিডিও ফুটেজে ও ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি যখন পতাকা তুলছেন, ঠিক তখন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও আধিকারিক বা ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপক নেই। ছাত্রনেতা তুহিন ঘোষ ও ইয়াসিন আলি জানান, সত্যি বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসে এ এক  নক্কারজনক ঘটনা।

অনুষ্ঠানের সময়সূচি ছিল সকাল ন'টা থেকে। আর উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ লুকিয়ে গুটিকয়েক কর্মচারী নিয়ে পতাকা তোলার কাজ শুরু করেন ৮.৩০-এ। এবং তিনি কোনও বক্তব্য না দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যান।

অন্য দিকের ছবি এরপরেই একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক-গবেষিকা, অফিসার্সরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা এবং সহ-উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হন। ৯ টার সময়ে শুরু হয় জাঁকজমকভাবে প্রজাতন্ত্র দিবস পালন অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের ভিড় ছিল চোখে দেখার মত। উপাচার্য শঙ্কর ঘোষ কেবলমাত্র পতাকা উত্তোলন করেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়েন। 

স‌ওয়া নটা নাগাদ আস্তে আস্তে লোকজন ভিড় করতে শুরু করে। ন'টার পরে সহ-উপাচার্য গৌতম পাল ও রেজিস্টার দেবাংশু রায় এই দুই শীর্ষ কর্তারা উপস্থিতিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের বাকি কর্মসূচি সম্পন্ন হয়।

এদিন মূল্যবান বক্তব্য রাখেন সহ উপাচার্য গৌতম পাল। তিনি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও উন্নত ও দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছেন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল এডুকেশন বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের শারীরিক কসরত এবং নৃত্যানুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র দিবসকে রাঙিয়ে তোলে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অফিসারদের বড় অংশ।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্যের পক্ষ নিয়ে সব মহল পথে নামল। সোমবার অধ্যাপক, অধ্যাপিকা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানে বসলেন। আর ‘শিক্ষাবন্ধু’র বহু সদস্য দুপুরে একটি মিছিল করলেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকাদের বড় অংশ সহ উপচার্য গৌতম পালের পক্ষেই আছেন। 
সহ উপাচার্যকেই তাঁরা সমর্থন করছেন। 

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শঙ্করকুমার ঘোষ ও সহ উপাচার্য গৌতম পালকে আজও থাকার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করেন নি। একাই বিজয়লক্ষ্মী ভবন দখল করে রেখেছেন।  

লিখত অভিযোগ ছাড়াই রেজিস্টার দেবাংশু রায়কে গত ১৭ জানুয়ারি ছুটিতে পাঠিয়েছিলেন উপাচার্য।

 ২০জানুয়ারি সহ উপাচার্য দেবাংশুবাবুকে পুনর্বহালের নির্দেশিকা জারি করেন। যা নিয়ে চরম অসন্তুষ্ট হন উপাচার্য। গত শুক্রবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রকাশ্যে উপাচার্য ও সহ উপাচার্যের বাতবিতণ্ডা হয়।
নজিরবিহীন এই ঘটনা দেখে সকলে হতবাক হয়ে যান। কথা কাটাকাটির পর সহ উপচার্য প্রশাসনিক ভবনে অবস্থানে বসেন। পরে তিনি ‘অসুস্থ’ হন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ একবারও সহ উপাচার্য গৌতম পালকে দেখতে আসেননি হসপিটালে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, কর্মকর্তা, অধ্যাপক মহল ও কর্মচারীদের বড় অংশ। মূলত তারাই সহ উপাচার্য গৌতম পালকে হসপিটালে নিয়ে ভর্তি করেন। 

সহ উপচার্যের পক্ষ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, ছাত্র-ছাত্রীদের বড় অংশ আন্দোলনে নামলেন এবং উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে স্লোগান তুলছেন। কর্মচারীদের বড় অংশ, ছাত্র-ছাত্রী, গবেষক ও অধ্যাপকরা তিন ফেব্রুয়ারিতে অবস্থান বিক্ষোপে বসবেন। তাঁদের একটাই দাবি অগণতান্ত্রিক আচরণ করে উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারেন না। তাদের দাবি উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ ইসি মিটিং করেছেন না অথচ অবৈধভাবে অর্থ খরচ করছেন এবং নিয়োগ করছেন। আসাম থেকে নিয়ে এসে তাঁর কাছেই গবেষণা করেছেন এমন কিছু ছাত্রকে তিনি নিয়োগ করেছেন। নিজের আত্মীয় তপোব্রত ঘোষকে টেকনিক্যাল এডভাইজার পদে নিয়োগ করছেন এই পদ অবৈধভাবে তৈরি করে নিয়োগ পত্র দিয়ে জয়েন করেছেন। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ইন্জিনিয়ার আছেন তাদের কাজকে সম্মান না দিয়ে তিনি বেআইনি নিয়োগ করছেন।  উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে আন্দোলন করছেন সচেতন মানুষ। আঙুল তুলছেন তার স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে। 

বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর অশান্ত।  প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে উপাচার্যের ঘরের সামনে অধ্যাপক, অধ্যাপিকা অবস্থানে বসছেন। দুপুরে ‘শিক্ষাবন্ধু’ নামে একটি সংগঠনের তরফে মিছিল হয়। তাতেও উপস্থিতি ছিল কর্মচারীদের বড় অংশ। ছাত্র-ছাত্রীরাও পথে নামেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উপাচার্যের বিপক্ষে  সিংহভাগ অধ্যাপক, অধ্যাপিকা। কারণ উপাচার্য এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করেছেন। 

সরকারি একটি নির্দেশিকা জারি করার পর, সেই নির্দেশিকাকে পরিবর্তন করতে পারেন না উপাচার্য। উপাচার্য ও সহ উপাচার্যের দায়িত্ব ভাগ করে সরকারি নির্দেশ অমান্য করেছেন উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ। তিনি সেই নির্দেশ অমান্য করে সহ উপাচার্য গৌতম পালের দায়িত্ব খর্ব করে নোটিশ দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে লিফলেট বিতরণ করেছেন উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষ যা সর্বত্র হাসির ঢেউ দেখা গিয়েছে। মিথ্যা কথা বলতে এবং লিখতে উপাচার্য শঙ্কর কুমার ঘোষের জুড়ি নেই। 

 ২১ জানুয়ারি চিঠি ইস্যু করেছেন সহ উপাচার্য। ওই দিন উপাচার্য ছুটিতে ছিলেন না।
সহ উপাচার্যের নির্দেশিকা পেয়ে দেবাংশু রায় রেজিস্টার পদে ফের কাজে যোগ দিয়েছেন। আবার উপাচার্য দেবাংশুবাবুর পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার হিসেবে কাজে যোগ দিতে নির্দেশিকা দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র সরকারকে। বর্তমানে দু’জনেই কাজ করছেন। তবে উপচার্যের টেবিলে সুভাষবাবুরই সই করা ফাইল যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকরা দোলাচলে পড়েছেন। কোন রেজিস্টারের টেবিলে ফাইল পাঠাবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না! সূত্রের খবর, উপাচার্য ও সহ উপাচার্যের সংঘাত না মিটলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী দিনে অচলাবস্থা হতে পারে। এই সংঘাত নিরসনে উচ্চ শিক্ষাদপ্তরের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কতটা স্বাভাবিক হবে তা সময়ই বলবে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু