ক্যাব তান্ডবে হাতেগোনা স্টেশন আক্রান্ত, রিপোর্ট রাজ্যের

মোল্লা জসিমউদ্দিন  

চলতি সপ্তাহে কেন্দ্রীয় এক প্রতিমন্ত্রী যেখানে রেলের সম্পত্তির নষ্ট রুখতে হামলাকারীদের গুলি চালাবার হুশিয়ারী দিয়েছিলেন। বিজেপির এক সর্বভারতীয় নেতা এই রাজ্যে রাস্ট্রপ্রতি শাসন জারীর মত পরিস্থিতি হয়েছে বলে দাবি রাখেন। বাংলার এক বিজেপির সাংসদ আবার অশালীনতা ছাড়িয়ে পুলিশের গুলিতে 'নিরোধ' লাগানো আছে ক্যাব পরবর্তী হিংস্বা রুখতে বলে তির্যক অভিযোগ আনেন। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের তরফে ক্যাব পরবর্তী হিংস্বা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করা হল। এই রিপোর্ট পেশের নির্দেশিকা টি গত সোমবার দুপুরে মামলা দায়ের করার দিনেই জারি করা হয়েছিল। বুধবার নির্ধারিত সময়ে তা হলফনামা আকারে জমা রাখার কথা ছিল। তবে প্রবীণ আইনজীবী গীতানাথ গাঙ্গুলির মৃত্যুতে বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্যের তরফে যে রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের একাংশ জনপ্রতিনিধিরা 'বাংলা জ্বলছে' বলে রে রে করে গোটা দেশ তুলকালাম করছেন। তার বাস্তবিক প্রতিফলন সেভাবে নেই কলকাতা হাইকোর্টের পেশ করা রাজ্যের রিপোর্টে । যদিও মামলাকারীরা রাজ্যের রিপোর্ট কে 'টেবিল রিপোর্ট' বলে কটাক্ষ করেছেন।রাজ্যের পক্ষে এদিন যে রিপোর্ট টি পেশ করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ১৩ ডিসেম্বর এর পর থেকে গোটা রাজ্যের ৭১৫ টি রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে মাত্র ৫ থেকে ৬ টি রেলওয়ে স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতকরা দশিভাগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তাতে। ক্যাবের হিংস্বা নিয়ে ৬৪ টি মামলা দাখিল হয়েছে, যেখানে ৯৩১জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। ক্যাবের হিংস্বায় রাজ্যের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে ৮ টি মামলা দাখিল হয়েছে। বেশিরভাগই বিজেপির নেতা কর্মীদের দায়ের করা এইসব মামলা। উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষত মুর্শিদাবাদ, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ কলকাতার একাংশে ক্যাব বিরোধী আন্দ্রোলনকারীদের হাতে একের পর এক হিংস্বাত্মক ঘটনা ঘটে। এইসব আন্দ্রোলনকারীদের নিদিষ্ট কোন সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দলের পতাকা সেসময় ছিলনা বলে প্রকাশ। ইতিমধ্যেই ৩৮ টি সরকারি বাস ভাঙচুর হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ টি সরকারি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনুরুপভাবে ৬০ টির মত বেসরকারি বাস ভাঙচুর হয়েছে। দক্ষিণপূর্ব এবং পূর্ব রেলের প্রায় ১০০ কোটি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে ক্যাব আন্দ্রোলন ঘিরে। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা এবং হাওড়ার উলুবেড়িয়া স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে,গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এক বিজেপি কর্মী সুরজিত সাহার পক্ষে আইনজীবী সুরজিত রায় চৌধুরী দ্রুত শুনানির আর্জি নিয়ে এক জনস্বার্থ মামলা দাখিল করেন।পিটিশনের শুনানি গ্রহণ করে সেদিন বেলা  দুটো নাগাদ মামলাকারী এবং সরকার পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব চলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। মামলাকারীর দাবি - "পশ্চিমবাংলা সরকারের  লোগো ব্যবহার করে রাজ্যের প্রধান অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় আইন মানবেন না বলে বিজ্ঞাপন চালাছেন, তা অসাংবিধানিক। কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করছেন। তাও বেআইনী।মুখ্যমন্ত্রীর এই কেন্দ্র বিরোধী অবস্থানের জন্যই রাজ্যজুড়ে হিংস্বাত্মক ঘটনাগুলি ঘটছে"। গত সোমবার এই মামলার শুনানি শুনে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আইনজীবী কে বুধবারের মধ্যেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছিল। এখনও অবধি কি কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাও জানতে চাওয়া হয়েছিল এই নির্দেশে। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশনের প্রবীণ সদস্য আইনজীবী গীতানাথ গাঙ্গুলির প্রয়াণের জন্য শুনানি মুলতবি ছিল। তবে আজ অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বেলা দুটো নাগাদ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলায় শুনানি চলে। সেখানে রাজ্যের তরফে ক্যাব নিয়ে হিংসাত্মক ঘটনা বলতে ৭১৫ টি রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে ৫ থেকে ৬ টি স্টেশন ক্ষতির কথা স্বীকার করা হয়েছে। ১৩ ডিসেম্বরের পর থেকে ৯৩১ জন গ্রেফতার হয়েছে। ৬৪ টি মামলা রুজু করা হয়েছে।                                                                                                                                                              


এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু