গনপিটুনিতে একসাথে ১২ জনের আমৃত্যু কারাবাস কালনা আদালতের

মোল্লা জসিমউদ্দিন  
 
সারাদেশে  যখন গণপিটুনি ঘটনায় সুবিচার না পাওয়ার অভিযোগে সরগরম, ঠিক তখনি  পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমা আদালতে এক বেনজির রায়দান ঘটলো গনপিটুনিতে জোড়া খুনের মামলায়। কলকাতা হাইকোর্টের অধিকাংশ আইনজীবীদের মত - কোন গণপিটুনি মামলায় একসাথে এতজনের আমৃত্যু কারাবাসের রায়দান ঘটেনি।  রাজ্যের সম্ভবত এইরুপ কড়া রায়দান সর্বপ্রথম বলা যায়। ২০১৭ সালে কালনার বারুইপাড়ায় ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাটি ঘটেছিল৷ সোমবার দুপুরে কালনা মহকুমা আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপন কুমার মন্ডলের এজলাসে এই মামলায় রায়দান ঘটে। ৩৪১, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১৪৯ ধারায় দোষী সাব্যস্তদের আমৃত্য কারাবাসের রায়দান দেন বিচারক তপন কুমার মন্ডল। ১২ জনের বিরুদ্ধে সমস্ত ধারায় কারাবাস গুলি একসাথে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ রয়েছে। ৩৪১ ধারায় ১ মাস জেল সহ ৫০০ টাকার জরিমানা অনাদায়ে ১৫ দিনের অতিরিক্ত জেল৷ ৩২৬ ধারায় ১০ বছরের জেল ৫০০০ টাকার জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত ৬ মাসের জেল। ৩০৭ ধারায় ১০ বছরের জেল ৫০০০ টাকার জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত ৬ মাসের জেল।  ৩০২ ধারায় আমৃত্যু কারাবাস ১০০০০ টাকার জরিমানা অনাদায়ে অতিরিক্ত ১ বছরের জেল। সব সাজা গুলি একসাথে চলবে বলে বিচারক তপন কুমার মন্ডল তাঁর আদেশনামায় জানিয়েছেন। সেইসাথে ঘটনায় নিহত ২ জন এবং আহত ৩ জনের পরিবার কে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য পূর্ব বর্ধমানের জেলা আইনী পরিষেবা কেন্দ্রের সম্পাদক কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় ১৯ জন অভিযুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে ১২ জন দোষী সাব্যস্ত এবং ৭ জন সাক্ষ্যপ্রমাণ এর অভাবে ছাড়া পেয়েছেন। যারা ছাড়া পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ১৪৯ ধারায় গনপিটুনিতে যুক্ত থাকার প্রমাণ মেলেনি। এই মামলায় ৫৭ জন সাক্ষী ছিলেন। সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিকাশ রায় জানিয়েছেন -" এই রায়ে সুবিচার পেল নিহতর পরিবার "।অপরদিকে  আসামি পক্ষের আইনজীবী প্রভাত সাহা ও অতনু মজুমদার জানিয়েছেন - " এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল করবো "। কালনা থানা এলাকায় এই মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার পারভেজ হাসানের ভূমিকায় সন্তুষ্ট আদালত বলে জানা গেছে। আদালত সুত্রে প্রকাশ, গত ২০/০১/১৭ তারিখে কালনার সীমান্তবর্তী নদীয়ার রানাঘাটের রাঘবপুর এলাকা থেকে  অনিল বিশ্বাস, মানিক সরকার, মধু মঙ্গল তরফদার, ব্যাঞ্জন বিশ্বাস, সমীর দাসরা কালনার বারুইপুর এলাকায় আমগাছে স্প্রে করার জন্য এসেছিলেন। বারুইপাড়ার সুভাষ এন্টারপ্রাইজের সামনে একদল  স্থানীয় এদের কে ঘিরে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি শুরু করে দেয়। লাঠি বাঁশ ইট দিয়ে আক্রমণ চলে। আহত অবস্থায় কালনা মহকুমা হাসপাতালে আনা হয়। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে সদর বর্ধমান হাসপাতালে আনা হয়। চিকিৎসাসীন অবস্থায় অনিল বিশ্বাস এবং সমীর দাস মারা যান। গনপিটুনি কান্ডে আহতদের মুখে  অভিযুক্ত হিসাবে কুন্তল, প্রীতম,  নাজির, অবিনাস, মিনতি, গনেশ, কার্তিকদের নাম উঠে আসে। গত ২২/০৮/১৭  তারিখে পুলিশ  চার্জশিট দাখিল করে থাকে। ৩৪১, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২, ১৪৯ ধারায় ১৯ জন অভিযুক্তদের মধ্যে ১২ জন অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হয়। বাকি ৭ জন সাক্ষ্যপ্রমাণ এর অভাবে ছাড়া পায়। সোমবার দুপুরে কালনা মহকুমা আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপন কুমার মন্ডল ১২ জন কে আমৃত্যু কারাবাস এর নির্দেশ দেন, সেইসাথে গণপিটুনি মামলায় নিহত ও আহতদের পরিবার কে সরকারি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য পূর্ব বর্ধমানে জেলা আইনী পরিষেবা কেন্দ্রের সম্পাদক কে নির্দেশ দেন।                                                                                                                                                                        

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু