ভুয়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বলিউড বাদশার হলফনামা চাইলো হাইকোর্ট


মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

  এবার বলিউড বাদশা শাহরুখ খানের হলফনামা তলব করলো কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বসাকের এজলাস। হাজার কোটির বেশি আর্থিক প্রতারণা হয়েছে, এইরুপ এক সর্বভারতীয় ভুয়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে বলিউড বাদশার কি সম্পর্ক রয়েছে, তা নভেম্বর মাসের মধ্যে জানাতে বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। অভিযোগ,  এই রাজ্যেই   ৫৩২ কোটি টাকার আর্থিক প্রতারণা ঘটেছে বলে প্রকাশ । কেন সিবিআই তদন্ত হবে না এই মামলায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বিচারপতি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি দেবাংশ বসাকের এজলাসে মামলাকারী প্রেমানন্দ মুখোপাধ্যায়ের দায়ের করা মামলার শুনানি ঘটে। সেখানে বলিউড বাদশার পাশাপাশি রাজ্য সরকার, অভিযুক্ত সংস্থাদের পুজো কেটে যাওয়ার দুসপ্তাহ পর অর্থাৎ নভেম্বর মাসের মধ্যেই হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ জারি হয়েছে। সেইসাথে  কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এই মামলায় তদন্তে আগ্রহী কিনা, তা জানাবার আদেশনামা রয়েছে। ২০১৪ সালে দিল্লি হাইকোর্ট অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউজিসির অনুমোদন না থাকার জন্য ভুয়ো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসাবে জানিয়ে দেয় । তারপরেও কিভাবে কোটি কোটি টাকা ডিগ্রি করানোর নামে সারাদেশ থেকে তুললো তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে বলিউড বাদশার ছবি ব্যান্ড এম্বাসাডর হিসাবে ব্যবহার করে প্রতারিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি স্বয়ং অভিনেতা এই বিতর্কিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় দু দুবার  অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে ।  তাই এই নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। সেই ধোঁয়াশা কাটাতেই বিচারপতি দেবাংশ বসাক বলিউড অভিনেতার হলফনামা তলব করেছেন। আদালত সুত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে পুরুলিয়ার এক প্রাক্তন সৈনিক প্রেমানন্দ মুখোপাধ্যায় তাঁর পুত্র কে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কোর্সে ভর্তি করানোর জন্য 'ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ প্লানিং ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড ' নামে এক সর্বভারতীয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১৬ লক্ষ খরচে ভর্তি করান। বিভিন্ন সংবাদপত্রে অভিনেতা শাহরুখ খানের ব্যান্ড এম্বাসাডর হিসাবে ছবি এবং এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানআয়োজিত ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় শাহরুখ খানের অংশগ্রহণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। এই জালিয়াতিতে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্নধার রয়েছেন অরিন্দম চৌধুরী মহাশয়। শিক্ষার্থীরা কোর্স সম্পন্ন করলেও  শংসাপত্র হাতে পাইনি । যা নিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা হয়েছিল ২০১৪ সালে। সেই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ইউজিসির অনুমোদন না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভুয়ো বলে মান্যতা দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। এরপরেই বিধাননগরে এই সংস্থার অফিসে টাকা ফেরত চাইলে হয়রানি সহ প্রাণনাশের হুমকি পান অভিযোগকারী, বলে দাবি । ২০১৫ সালে বিধাননগর ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তাতেও কোন কিছু হয়নি। এমনকি নিম্ন আদালতে এই মামলার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার দুদুবার পুলিশ রিপোর্টে অভিযোগে  সারবত্তা নেই বলে জানিয়ে দেন।  পুলিশ এবং নিম্ন আদালতের মাঝেই ২০১৮ সালে আইনজীবী মধুসূদন সরকার ও দীপাঞ্জন দত্তের মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বসাকের এজলাসে মামলা দাখিল করেন অভিযোগকারী। এই মামলায় সরকারি আইনজীবী রয়েছেন অসীম গাঙ্গুলি। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট এর বিচারপতি দেবাংশ বসাক এই মামলার সমস্ত নথিপত্র দেখে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার কে ভৎসনা করে বলেন - এই মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে   কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি? সেইসাথে রাজ্যের আইনজীবী কে সিবিআই তদন্তের ইংগিত দেন স্বয়ং বিচারপতি। রাজ্য সরকার, অভিযুক্ত ভুয়ো সংস্থার কর্নাধার সর্বপরি বলিউড বাদশার হলফনামা দাখিলের নির্দেশজারি হয়। সেইসাথে সিবিআই কর্তৃপক্ষ এই মামলায় তদন্তে আগ্রহী কিনা তার মতামত চাওয়া হয়েছে বিচারপতির বেঞ্চে। উল্লেখ্য, সর্বভারতীয় এই ভুয়ো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এই রাজ্য থেকেই ৫৩২ কোটি টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ। সারাদেশে এই হিসাব ধরলে কয়েক হাজার কোটিতে দাঁড়াবে। এই মামলায় পরিধি সর্বভারতীয় পর্যায়ের। তাই সিবিআই তদন্তের দাবি অভিযোগকারীর।                                                                                                                                                                                                                                                

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু