বনগাঁ পুরসভার অনাস্থা প্রক্রিয়া নিয়ে জরুরি কালীন শুনানি শুনলো না হাইকোর্ট

মোল্লা জসিমউদ্দিন,

একদিকে যখন বারাসাত জেলাশাসক অফিসে হাইকোর্টের নির্দেশে পুলিশসুপারের তদারকিতে অনাস্থা ভোট চলছে। ঠিক সেসময় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর ববি শরাফের এজলাসে এই অনাস্থা ভোট নিয়ে জরুরিকালীন শুনানির আবেদন রাখে বিজেপি।বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর ববি শরাফের বেঞ্চে এই মামলা রিলিজ করে জানিয়ে দেওয়া হয় - 'রেগুলার বেঞ্চেই এই মামলার শুনানি হবে'। কিসের জন্য জরুরিকালীন শুনানি? সে নিয়েও উঠে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। এই মামলার সরকারি আইনজীবী ভাস্কর বৈশ্য বলেন - "মেট্রোরেলের সুরঙ্গ বিপর্যয় মামলা টি জরুরিকালীন বটে। আর এক্ষেত্রে গত ২৬ আগস্ট বিচারপতি সমাপ্তি চট্টপাধ্যায় এর এজলাসে এই মামলায় রায়দান ঘটেছে। সেখানে ভোটের দিনেই হাইকোর্টে মামলা করে আবার পুরসভার আইনী জটিলতা বাড়াবার প্রয়াস নিয়েছিল মামলাকারীরা "। বিজেপির দাবি ছিল - যারা বনগাঁ পুরসভার অনাস্থাপ্রস্তাব এনেছে তারাই এখন তৃনমূলে। তাই এই অনাস্থা ভোট অবৈধ। এদিন বিচারপতি শেখর ববি শরাফ এজলাসে এই পিটিশনের শুনানিতে বলেন -' মানুষের মন পরিবর্তন ঘটলে সেখানে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কোন এক্তিয়ার নেই '। উল্লেখ্য, আজ বারাসাত জেলাশাসক অফিসে বনগাঁ পুরসভায় অনাস্থা ভোটে ১৪-০ ব্যবধানে জিতে তৃনমূল। বিজেপির কোন কাউন্সিলার উপস্থিত হননি। পুলিশসুপারের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনী ছিল ভোট শান্তিতে করার জন্য। ২২ আসন বিশিষ্ট এই পুরসভায় ১৪ জন কাউন্সিলার তৃনমূলে। ১ জন সিপিএমের কাউন্সিলার এবং বাকি ৭ জন বিজেপির কাউন্সিলার আছেন । গত ২৬ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টপাধ্যায় এর এজলাসে বঙ্গ রাজনীতিতে বহু চর্চিত বনগাঁ পুরসভার অনাস্থা মামলায় চুড়ান্ত নির্দেশদান   ঘটে। আগামী ১২ দিনের মধ্যে জেলাশাসকের অফিসে পুলিশ সুপারের তদারকিতে এই ভোট হবে বলে আদেশনামায়   জানিয়েছিলেন বিচারপতি। কোন গন্ডগোল হলে তার দায়ভার নিতে হবে অর্থাৎ আদালত অবমাননার মামলা রুজু হবে ভোট বানচালকারীদের বিরুদ্ধে। যদিও এই মামলার প্রথম পর্যায়ে বিজেপি কাউন্সিলাররা সংখ্যায় যতটা সুবিধাজনক অবস্থায় ছিল। তাতে গত দেড় মাসে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলার    'ঘরের ছেলেরা' ফের ঘরে অর্থাৎ তৃনমূলে চলে আসায় ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির। ওইদিন বিচারপতি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন - 'এই পুরভোটের সমস্ত নির্বাচনী বিষয় জেলাশাসক অফিসে হবে। সেইসাথে প্রতিটি পুর কাউন্সিলারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবেন পুলিশ সুপার।পুরসভার প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখবেন  সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসক  '। আগে যে অনাস্থার ভোট ঘটেছে তা বাতিল করে নুতন করে অনাস্থা ভোটের চুড়ান্ত নির্দেশ  দেওয়া হয়। আগামী ১২ দিনের মধ্যে সমস্ত ভোট পর্ব শেষ করার নির্দেশিকা ছিল। প্রসঙ্গত, এই পুরভোট নিয়ে বারবার কলকাতা হাইকোর্টে সমালোচিত হয়েছে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন। সেইসাথে শাসকদলের অবস্থান ঘিরে নানা মন্তব্য উঠে এসেছে এই মামলার শুনানি পর্বে। কখনো তৃনমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বিচারপতির বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে যাওয়ার নজির মিলেছে। আবার রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত কে ঘিরে সরকারি আইনজীবীদের কর্মবিরতির ঘটনাও দেখা গেছে।এর আগে শুনানিতে হয়ে যাওয়া অনাস্থা ভোট নিয়ে  বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ছিল - 'গনতন্ত্রের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে, অশান্তি রুখতে পুলিশ ব্যর্থ। পুলিশ নিরপেক্ষ ছিলনা অনাস্থা ভোটের দিন। গনতন্ত্র আজ ফুটপাতে দাঁড়িয়েছে' এই বিধ কড়া পর্যবেক্ষণ পাওয়া গিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টপাধ্যায়ের এজলাসে বনগাঁ  পুর মামলায়।এই মামলায় বাদী বিবাদী পক্ষের শুনানির সময় বিচারপতি সমাপ্তি চট্টপাধ্যায় এইবিধ পর্যবেক্ষণ গুলি রেখেছিলেন । তখন বিচারপতি বলেছিলেন - 'এই মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারেনা'। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টপাধ্যায় বনগাঁ পুরসভার অনাস্থা বিষয়ক মামলাটিতে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সেদিনকার অবস্থান নিয়ে কড়া ভৎসনা করেন। সেদিন ১১ জন কাউন্সিলার অনাস্থা ভোটে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। সেজন্য পুলিশ কে দায়ী করে ছিলেন বিচারপতি। যারা অনাস্থাপ্রস্তাব আনার জন্য হাইকোর্টে মামলা করলেন, তারা অনাস্থা ভোটে গরহাজির এটা কি করে মানা যায়?  পুলিশ ঝামেলা রুখতে তৎপর ছিলনা। ১০ কখনোই ১১ এর বেশি হতে পারেনা। সেদিন পুর চেয়ারম্যান বেলা চারটে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতেন।এই বিধ মন্তব্যগুলি এই মামলায় শুনানিতে উঠে এসেছিল বিচারপতির পর্যবেক্ষণে । যদিও এই মামলার গত শুনানি গুলিতে বিচারপতি পুনরায় অনাস্থা ভোটের ইংগিত দিয়ে বলেছিলেন - মহকুমাশাসক / জেলাশাসক অফিসে পুলিশসুপারের উপস্থিতিতে অনাস্থা ভোট করা উচিত। সেসময় উত্তর দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর পুরসভার অনাস্থা মামলায় পুলিশ সুপার কে সমস্ত কাউন্সিলারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন এই বিচারপতি। বনগাঁ পুর মামলায় বিচারপতি বনগাঁর পুর চেয়ারম্যান কে নির্লজ্জ ক্ষমতালোভী বলে ভৎসিত করেছেন। এই মামলায় বিচারপতির পর্যবেক্ষণ ঘিরে তৃনমূলের আইনজীবী তথা সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতির সাথে তর্কবিতর্কতে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তের সাথে মতবিরোধ ঘটে। বিচারপতির রাজনৈতিক পর্যবেক্ষণ দাবি করে রাজ্যের সরকারি আইনজীবীরা এই বিচারপতির এজলাস বয়কট করে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন । রাজ্যের আইনমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী কেও জানানো হয় তখনকার অভিযোগ। তবে এজলাস বয়কট টি একদিনের মাথায় তুলে নেন সরকারি আইনজীবীরা। উল্লেখ্য সেদিন কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশন ভোটে ফলাফল ঘোষণা হয়। সেইসাথে শাসকদলের আইনজীবীদের ব্যাপক পরাজয় ঘটে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে বনগাঁ পুরসভার মামলা ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। ২২ আসন বিশিষ্ট বনগাঁ পুরসভায় তৃনমূলের পক্ষে ১০ জন কাউন্সিলার, বিজেপির পক্ষে ১১ জন কাউন্সিলার এবং ভোটদানে বিরত সিপিএমের ১ জন কাউন্সিলার ছিলেন। কংগ্রেসের ১ জন কাউন্সিলার তৃণমূল কে সমর্থন করায় তৃনমূল ১০ সংখ্যায় পৌঁছেছিল। গত জুলাই মাসে প্রথম দিকে বিজেপির ৩ জন কাউন্সিলার বনগাঁ পুরসভায় অনাস্থা ভোট চেয়ে মামলা দাখিল করেন। তাতে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টপাধ্যায় অনাস্থা প্রক্রিয়া তিনদিনের মাথায় শুরু এবং সাতদিনে শেষ করার নির্দেশ দেন। বিজেপির ২ কাউন্সিলারের বিরুদ্ধে তৃনমূল কাউন্সিলার কে অপহরণ সহ তোলা আদায়ের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। যদিও অপহৃত ওই তৃণমূলী কাউন্সিলার রহস্যজনকভাবে ফিরে আসেন নিজ বাড়ীতে। পরিবারের দাবি - মুক্তিপণ দিয়ে নাকি মুক্তি মিলেছে। বিজেপির ২ জন কাউন্সিলারের গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ অন্তবর্তী স্থগিতাদেশ জারী করে। ঠিক এইরকম পেক্ষাপটে বনগাঁ পুরসভায় অনাস্থা ভোটের দিন মামলায় ওয়ারেন্টের দোহায় দিয়ে পুরসভার গেটে আটকে দিয়েছিল বিজেপির ২ কাউন্সিলার কে। সেইসাথে পুরসভার একটি ঘরে বাকি ৯ জন কাউন্সিলারদের তালা মেরে দিয়েছিল শাসকদলের তথা পুর চেয়ারম্যানের লোকজন। এই বিধ তথ্য মামলায় হলফনামা আকারে বিজেপি জমা দেয়। সেইসাথে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের ভিডিও ক্লিপিংস, নিউজ কাটিং দেখানো হয় এজলাসে। বিচারপতি সমাপ্তি চট্টপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করে ছিলেন - 'গণতন্ত্রের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। আজ গণতন্ত্র ফুটপাতে দাঁড়িয়েছে....'গত ২৬ আগস্ট বিচারপতি সমাপ্তি চট্টপাধ্যায় এই মামলার চুড়ান্ত নির্দেশে - আগামী ১২ দিনের মধ্যে অনাস্থা ভোট শেষ করার নির্দেশিকা জারী হয় । সেটি জেলাশাসকের অফিসে এবং পুর কাউন্সিলারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশ সুপার কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ২২ আসন বিশিষ্ট এই পুরসভায় তৃণমূল ১৪ তে দাড়িয়ে রয়েছে। ৭ জন বিজেপিতে। সিপিএমের ১ জন কাউন্সিলার ভোটদানে বিরত থাকার অবস্থানে অনড়। বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর ববি শরাফের এজলাসে জরুরিকালীন শুনানি চেয়ে বিজেপি পিটিশন দাখিল করে। বিজেপির দাবি ছিল - যারা অনাস্থা ডেকেছে, আজ তারা তৃনমূলে। তাই এই অনাস্থাভোট অবৈধ। বিচারপতি জরুরিকালীন শুনানির যৌক্তিকতা তুলে জানিয়েদেন - এই মামলা রেগুলার বেঞ্চেই চলবে। অর্থাৎ পিটিশন টি খারিজ করে দিলেন বিচারপতি। অনেকেই বনগাঁ পুরসভার বিজেপির এই 'কুমির কান্না' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।                                                                                                                                                                                                                                                                                 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু