কলকাতা প্রেসক্লাবে গনতন্ত্র নিয়ে সাংবাদিক - অধ্যাপক - প্রাক্তন বিচারপতিরা কি বললেন?


মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

শনিবার দুপুর কলকাতা প্রেসক্লাবে 'ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়ার্চ' এর পরিচালনায় 'গণতন্ত্রে মিডিয়ার ভূমিকা কি হওয়া উচিত' শীর্ষক আলোচনা চলে। এই আলোচনায় প্রাক্তন চিফ জাস্টিস, প্রাক্তন পুলিশ কর্তা, থেকে অধ্যাপক, মানবাধিকার কর্মী,   সমাজসেবী সহ বাংলা সংবাদমাধ্যমে একঝাঁক বর্ষীয়ান সাংবাদিক ছিলেন। ভারতীয় সংবিধানে গণতন্ত্রের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিতর্কের পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর পর্ব চলে। এই আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা মুম্বাই হাইকোর্টের প্রাক্তন চিফ জাস্টিস চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত, অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী, ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক সত্যব্রত চৌধুরী, বর্ষীয়ান সাংবাদিক হিসাবে স্নেহাশিস সূর, রজত রায়, সুদীপ্ত সেনগুপ্ত প্রমুখ ছিলেন। আলোচনা সভার মূল উদ্যোক্তা তথা আয়োজক সংগঠনের 'স্ট্রেট কো অডিনেটর' উজ্বয়নী হালিম সভা সঞ্চালনায় সাংবাদিক স্নেহাশিস সূরের পাশাপাশি ছিলেন।

শনিবার দুপুরে কলকাতা প্রেসক্লাবে এই আলোচনা সভা শুরু হয় সুপ্রিম কোর্টের  প্রাক্তন বিচারপতি তথা মুম্বাই হাইকোর্টের চিফ জাস্টিস চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্বোধনী বক্তব্য পেশের মাধ্যমে। যিনি এই সংগঠনের অর্থাৎ 'ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকশন ওয়ার্চ' এর সভাপতি পদে আসীন। তিনি বলেন -" বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী সম্পকে ঠিকঠাক অবগত করানোর দায়িত্ব মিডিয়ার। প্রার্থীর সম্পত্তির খতিয়ান, ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত কিনা তা সঠিকভাবে প্রকাশ করতে হবে সাংবাদিকদের। তাহলে জনমানসে সেই প্রার্থী কতটা উপযুক্ত তা বোঝা যাবে । সেইসাথে ভোটাররা ইভিএম না ব্যালটে ভোট চাইছেন তার জনমত খতিয়ে দেখা উচিত মিডিয়ার "।  এরপর বর্ষীয়ান সাংবাদিক রজত রায় তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বক্তব্য তুলে বলেন - " দেশে গণতন্ত্রে এক সংকটময় পরিস্থিতি চলছে। সেটা কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে। সংবিধানের অধিকার প্রাপ্ত স্বতন্ত্র সংস্থাগুলি আজ আজ্ঞাবহ রুপে ব্যবহার হচ্ছে"।  এই প্রসঙ্গে তিনি গত লোকসভা নির্বাচনে বারাণসি কেন্দ্রের পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদির উদাহরণ টেনেছেন। যেদিন ভোট চলছে সেদিন প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার নরেন্দ্র মোদী কেদারনাথের মন্দিরে ধ্যান করছেন!  যা নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বেআইনী।বিরোধী দলের নেতাদের অবশ্য সর্তকীকরণ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। তবে নরেন্দ্র মোদির বেলায় কোন কিছুই নয়। রজত বাবু লোকসভা ভোটের আগে 'নমো' টিভির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। লাইসেন্স বিহীন চ্যানেল কিভাবে ভোটের প্রচারে ব্যবহার হল। তা খতিয়ে কেন দেখলো না কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন?  এই প্রশ্ন তুলবার পাশাপাশি সংসদে সাংসদদের খাবারে বিপুল ভর্তুকি নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি। রান্নার গ্যাসে ভর্তুকির অর্থ না নেওয়ার জন্য আর্থিকভাবে স্বচ্ছলদের কাছে আবেদন করছেন প্রধানমন্ত্রী, অথচ কম পয়সায় সংসদে বহুমূল্যের খাবারদাবার খাচ্ছেন সাংসদরা।এই নিয়ে কটাক্ষ উঠে আসে এই আলোচনায়।  গনতন্ত্রের প্রধান স্তম্ভ বিচারবিভাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন সাংবাদিক রজত রায়। তিনি বলেন - জম্মু কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের পর কাশ্মিরীদের বন্দিদশা শুরু হয়েছে। সেখানে এই ধারা বিলোপে আইনী অবস্থানের জন্য পিটিশন দাখিল হলেও বিচারপতিরা পিটিশন শোনা কেন জরুরি তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। এই প্রসঙ্গে অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের  প্রাক্তন বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বিচারপতিদেরও ভুলভ্রান্তি হয় এর পক্ষে সওয়াল করেছেন।বেশিরভাগ মিডিয়া আজ দলদাসে পরিণত হয়েছে। এইরূপ মন্তব্য উঠে আসে বিভিন্ন বক্তাদের গলায়। জরুরি অবস্থা জারীর সময় হাতেগোনা কয়েকটি মিডিয়া ছাড়া বাকিরা মাথানত করেছিল বলে বিভিন্ন দাবি শোনা যায় এই আলোচনা সভায়। বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে পরিচিত সমালোচক তথা অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন " নির্বাচনী গণতন্ত্র অপেক্ষা বৃহত্তর গণতন্ত্র প্রতিস্টা করা জরুরি। শাসকদল সর্বদা ভোট কে জিনিস কেনবার 'সামগ্রী' ভাবে। বিরোধী দল দুর্বল হলেও শাসক দলের বাড়বাড়ন্ত বেশি দেখা যায়। স্থানীয় সরকার অর্থাৎ পঞ্চায়েত / পুরভোটের আইন আগে সংস্কার জরুরি। তা নাহলে বৃহত্তর গণতন্ত্র প্রতিস্টা করা যাবেনা"। বামেদের রাজ্য নির্বাচন কমিশনের পঞ্চায়েত ভোটের ৪২ নং ধারা এবং পুরভোটের ৩৬ নং ধারা কেন সংশোধন করছেনা বর্তমান সরকার তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন এই অধ্যাপক। মহারাষ্ট্র হরিয়ানার মত রাজ্যে পঞ্চায়েত / পুর ভোট আইন গণতন্ত্রের পক্ষে সুখকর।কোন নিদিষ্ট আইন না থাকার জন্য বিদেশিরা পার পেয়ে যান বলে অভিযোগ তুলেন তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনে বাংলাদেশের অভিনেতা ফিরদৌসের প্রসঙ্গ টানেন। অল ইন্ডিয়া ইলেকশন সার্ভিস চালুর দাবিতে সরব হতে দেখা যায় তাঁকে। সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত বলেন - "কোন দল ভোটে হেরে গেলে তখন ইভিএম খারাপ আর ব্যালট ভালো হয়। অথচ তারাই ইভিএমে একসময় জিতে এসেছে! "  পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্ত বাংলার সংবাদমাধ্যম অত্যন্ত দুর্বল চরিত্রের বলে অভিযোগ তোলেন। এই আলোচনাসভায় জরুরি অবস্থা জারীর সময় গ্রেপ্তার হওয়া  সাংবাদিক কমল ভট্টাচার্য কে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন কেউ কেউ।এই আলোচনা সভার উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উজ্বয়নী হালিম বলেন - " আমরা প্রতিটি নির্বাচনেই অবাধ ও নিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে আসছি, আমাদের এই সার্বিক জনহিতকর লড়াইতে সংবাদমাধ্যম কে বন্ধুর মত পেতে চাই "।                                                                                                                                                                                                                                                                                                 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু