অনুব্রত কে কি দলনেত্রী কালো তালিকাভুক্ত করলেন ভোটগুরুর পরামর্শে ?



মোল্লা জসিমউদ্দিন,       

তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য ভিক্তিক বৃহত্তর রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসাবে পরিচিত 'একুশে জুলাই',  সেইসাথে দক্ষিণবঙ্গের বড় সমাবেশ বলতে বোঝায় 'সাতাশে জুলাই'। দুটিই কিন্তু শহীদ দিবস হিসেবে পরিচিত রাজ্যবাসীর কাছে।আর এই দুটিতেই বড় ভূমিকায় দেখা যায় রাজনীতির মঞ্চে পিঞ্চ হিটার বক্তা   অনুব্রত মন্ডল ওরফে কেস্ট মোড়ল কে। গত জুলাই মাসের শেষে এই দুটি মেগা রাজনৈতিক সমাবেশে দেখা মিলেনি অনুব্রতের। যদিও একুশে জুলাইয়ের দিন কয়েক আগে কলকাতার পিজি হসপিটালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। অর্শ সহ শ্বাসজনিত শারীরিক সমস্যা তাঁর দীর্ঘদিনের। তবে বিরোধী শিবিরের দাবি - 'আসলে ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের প্রেসক্রিপশন ফলো করছেন মমতা'।  লোকসভার ভোটে রাজ্যজুড়ে অভাবনীয় বিপর্যয় নেমে এসেছে তৃনমূলের কাছে। ভোটের আগে বিয়াল্লিশের  বিয়াল্লিশ স্লোগান ফলপ্রকাশে সব অংক গুলিয়ে দেয় তৃনমূলের কাছে। এমনকি মঙ্গলকোটের ক্ষীরোগ্রামে যোগাদ্যা মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাতকারে অনুব্রত মন্ডল জানিয়েছিলেন - " মায়ের সাথে কথা হয়েছে,  ৪২ টি আসন আমরা পাচ্ছি তা জানিয়েছেন মা"। এইরুপ মন্তব্য রাজ্যবাসী কে অবাক করে দিয়েছিল সেসময়। তবে লোকসভা নির্বাচনে ফলাফল ঘোষণায় বঙ্গ রাজনীতিতে আমদানি হল পেশাদার পরামর্শদাতার। যদিও তৃনমূল কংগ্রেসের তরফে ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের সাথে কোন বাণিজ্যিক চুক্তি হয়নি বলে দাবি করেছে। ফলাফল ঘোষণার মাসেই অর্থাৎ জুন মাসের শেষের দিকে নবান্ন তে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ভোটগুরুর বৈঠক হয় বলে প্রকাশ। এর কিছুদিন পরেই দক্ষিণবঙ্গের আটজন গুরত্বপূর্ণ নেতা / মন্ত্রী দের কালোতালিকায় আনার পরামর্শ দেন ভোটগুরু। আর এই আটজনের মধ্যে বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডল অন্যতম। এইরুপ দাবি সংবাদমাধ্যমে।দলনেত্রীর কাছে ভোটগুরুর প্রেসক্রিপশন মানা সহজ ব্যাপার ছিল না। তবে আগামী বিধানসভার ভোটে  রাজনৈতিক মাটি আগেকার মত জায়গায় আনতে গেলে   অনেক কিছুই মানতে হবে তাঁকে। 

দেখা গেল একুশে জুলাইয়ের দিন কয়েক আগে অনুব্রত মন্ডল চিকিৎসার জন্য ভর্তি হলেন কলকাতার পিজি হসপিটালে। তাঁর শারীরিক সুস্থতা কোনদিনেই ভালো ছিল না। বিশেষত শ্বাসজনিত বিষয়ে। তবে এমন গুরতর অসুস্থ নন যে তিন - চার কিমি দূরে কিছুক্ষণের জন্য মঞ্চে আসতে পারবেন না। যদিও হাসপাতালের চিকিৎসকদের বাইরে যাওয়া নিয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে অনেকেই সম্প্রতি ব্রিগেডে সিপিএমের সমাবেশে অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এর উদাহরণ টেনেছেন। যিনি গাড়ীতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার নিয়ে  নাকে নল  দেওয়া অবস্থায় এসেছিলেন। এমনকি প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন জীবিত থাকাকালীন ব্রেণ স্টোকে প্রায় পারালাইসিস হওয়া স্বতেও হুইলচেয়ার করে সিপিএমের দলীয় সভায় উপস্থিত হয়ে উজ্জীবিত করেছেন কর্মী সমর্থকদের কে। যদিও অনুব্রত মন্ডল রাজনৈতিকভাবে সিপিএমের এই দুই নেতার সমকক্ষ নন। তবে ২০১৩ সালের পর থেকে রাজ্য রাজনীতিতে তিনি যেভাবে তৃনমূলের কাছ থেকে বড় বড় দায়িত্ব পেয়ে আসছিলেন, সেখানে কলকাতার বাইরে নেতাদের মধ্যে অনুব্রত মন্ডল অন্যতম তা বলা যায়। সমগ্র বীরভূম জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, পশ্চিম মেদিনীপুরের বড় অংশে দলীয় পর্যবেক্ষক হিসাবে উঠে এসেছিলেন। যদিও লোকসভা  ভোটের পর দলনেত্রী বেশ কিছু জেলার ( লোকসভা আসনে)  দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাঁকে। পুলিশ কে বোমা মারার নিদান থেকে বিরোধী শুন্য পঞ্চায়েত ভোট করবার কারিগর অনুব্রত মন্ডল  কে সর্বদা আগলেছেন দলনেত্রী।এমনকি লোকসভা নির্বাচনের সময় অনুব্রত কে 'বাঘের বাচ্ছার মত লড়াই করার ' টোটকা দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সব হিসেব পাল্টে গেছে গত ২৩ শে জুন। বিজেপি এই রাজ্যে ২ টি আসন থেকে ১৮ তে দাঁড়িয়েছে। ভোটের শতকরা হিসাবে তৃনমূলের ধারেকাছে বিজেপি চলে আসে।  এইরকম পরিস্থিতিতে রাজ্য রাজনীতিতে পেশাদার ভোটগুরু হিসাবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোরের আবির্ভাব ঘটে। ভোটগুরুর টিম পর্যবেক্ষণ করা আভ্যন্তরীণ রিপোর্টে  আটজন নেতা মন্ত্রীদের বসিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেয়। জনমানসে এঁদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি দলের ক্ষতির কারণ বলে দাবি উঠে বিভিন্ন স্তরে। এইসবের মাঝেই তৃনমূলের বড় সমাবেশ একুশে জুলাই চলে আসে। গতবারের একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে অনুব্রত মন্ডল উন্নয়নের বার্তা দিয়েছিলেন। দক্ষিণবঙ্গ থেকে জনসমাগম ঘটানোতে অনুব্রতের জুড়ি মেলা ভার।তবে এবারে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে দেখা মিললো না কেস্টর। এমনকি তাঁর জেলায় বাসাপাড়ায় সুচপুরের গনহত্যা নিয়ে সাতাশে জুলাইয়ের শহীদ দিবসেও তাঁর দেখা মিলেনি। আগে কোন নির্ধারিত রাজনৈতিক সভায় যেতে না পারলে মঞ্চের মাইকে পরিচিতর মোবাইলে 'লাইভ' বক্তব্য পেশ করতেনা। সেটাও এবার হয়নি একুশে জুলাইয়ের কলকাতার মঞ্চে কিংবা নিজের জেলার সাতাশে জুলাইয়ের বাসাপাড়ার মঞ্চে। এখান থেকেই শুরু গুঞ্জন, তাহলে কি আগামী বিধানসভার ভোটের কথা ভেবে ভোটগুরুর পরামর্শে অনুব্রত মন্ডল কে জনমানস থেকে ধীরে ধীরে সরাচ্ছেন দলনেত্রী? এই প্রশ্ন সব মহলেই।                                                                                                                                                                                                                        

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু