ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালতে মামলার গতি নিয়ে প্রশ্ন মক্কেলদের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বাম আমলে জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু রাজ্য জুড়ে ভূমিহীনদের পাট্টা বিলিতে জোর দিয়েছিলেন। ব্যাপকভাবে পাট্টা বিলি কর্মসূচিতে দেখা যায় জমি নিয়ে আইনী জটিলতা। তাই তখন অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে বিধাননগরে ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালত চালু করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ৷ এটি কলকাতা হাইকোর্টের আওতায় থাকে। সেইসাথে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা সারা রাজ্যের ভূমি বিষয়ক মামলা গুলি দেখেন৷ ৬ টি পদে বিচারপতিরা থাকলেও ৩ জন ভূমি আধিকারিকদের প্রশাসনিক বিষয় গুলি দেখেন। এবং বাকি ৩ জন ৩ টি আলাদা বেঞ্চে ভূমি মামলাগুলি পর্যবেক্ষণ, শুনানি, রায়দান দিয়ে থাকেন৷ মামলার সংখ্যা পাহাড়তুল্য হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রায়দান কম ঘটে। তাই ২০১০ সালে কলকাতা হাইকোর্টে ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালতে বিচারপতি সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মামলা হয়। তাতে ৬ জন বিচারপতি বেড়ে ৮ জনে দাঁড়ায়৷ তবে প্রশাসনিক বিচারপতি ৪ জনের জায়গায় ২ জন এবং বিচারবিষয়ক ৪ জনের জায়গায় ৩ জন রয়েছেন। অর্থাৎ ৮ টি পদে বর্তমান বিচারপতি সংখ্যা ৫ জন৷ ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালত সুত্রে প্রকাশ, প্রত্যেক বছর ৫ হাজারের বেশি মামলা দাখিল হয় এই আদালতে। উত্তরবঙ্গে সার্কিট বেঞ্চ হওয়ায় ৫ টি জেলার মামলার চাপ কলকাতা হাইকোর্টে আসে না বললেই চলে। তবে ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালতে রাজ্যের সব জেলার ভূমি মামলাগুলি রুজু হয়৷ অর্থাৎ মামলার চাপ অত্যন্ত বেশি। অপরদিকে ৪ টি বেঞ্চে প্রত্যেকদিন গড়ে ৩০ টি সর্বমোট ১২০ টির মত মামলার শুনানি হয়৷ তাতে অর্ধেক মামলার কোন শুনানি না হয়ে পরবর্তী তারিখ পরে। কেননা বিচারবিষয়ক বিচারপতিরা আদালত চালুর প্রথম পর্যায়ে নিজের বেঞ্চে বসলেও দ্বিতীয় পর্যায়ে ভিন্ন বেঞ্চে মামলার শুনানি শোনেন। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে একটা বেঞ্চে ৩০ টি মামলা থাকলে ১৫ টির শুনানি হয় বাকি ১৫ টির পরবর্তী শুনানির তারিখ পরে। মামলাকারীদের অভিযোগ, এক একটি মামলার ডেট পরে নুন্যতম ছয়মাস পর। কেউ কেউ আবার পরের বছরে মামলার দিন পান।এইরূপ পরিস্থিতিতে মামলার পাহাড় জমছে, তবে মামলার নিস্পত্তি ঘটছে না সেভাবে। দেওয়ানি মামলার অন্যতম বিষয় হচ্ছে ভূমি ( জমি/ জায়গা) । মহকুমা আদালত কিংবা জেলা আদালতে সিভিল মামলা হারলে মামলাকারীরা বিধাননগরের করুনাময়ী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এই ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালতে আসেন। আবার কলকাতা হাইকোর্টে কেউ সিভিল মামলা রুজু করতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিচারপতিরা নিদিষ্ট ফোরাম অর্থাৎ ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালতে যাওয়ার নির্দেশিকা দেন। শতাধিক আইনজীবী রয়েছেন ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালতে। তাঁরা অর্থাৎ বার এসোসিয়েশন বারবার মামলা নিস্পত্তিতে গতি আনতে বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে সরব হয়েছেন। বিধাননগর ল্যান্ড ট্রাইবুনাল আদালতের বার এসোসিয়েশনের সম্পাদক বিশ্বপ্রিয় রায় ওরফে ডালু বাবু জানান - "বিষয়টি আমরা রাজ্যের আইনমন্ত্রী এবং ভূমিমন্ত্রী অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী কে জানিয়েছি। যাতে বিচারপতির সংখ্যা বাড়ে "। নুতন এবং পুরাতন মামলার চাপ যেভাবে বাড়ছে তাতে দীর্ঘমেয়াদি পরবর্তী শুনানির তারিখ পাওয়া ছাড়া সুবিচার পাওয়া দুস্কর বলে মামলাকারীদের দাবি। সুপ্রিম কোর্ট যেখানে মামলার পাহাড় কমাতে স্বতন্ত্র বিষয়ে ভিন্ন কোর্ট তাও কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের দিয়ে চালু করেছে। সেখানে শুন্য পদগুলি পূরণে রাজ্য কিংবা কেন্দ্রীয় সরকার কি উদ্যোগী হতে পারেনা। যদিও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি কেন্দ্রীয় সরকার কে বিচারপতিদের সংখ্যা বাড়ানোর দাবিতে লিখিত ভাবে জানিয়েছে৷ এখন দেখার জনগণ দ্বারা নির্বাচিত সরকার আদৌও জনমুখী উদ্যোগ নেয় কিনা?