মঙ্গলকোটে শাসক দলের নেতারা বেনামে সম্পত্তি করছেন ?

আর্থিক কেলেংকারীর খবর নুতন নয় মঙ্গলকোটবাসীদের কাছে। বামজামানায় সিপিএমের কুখ্যাত নেতা ডাবলু আনসারীর বিপুল আর্থিক উথান ঘটেছিল। অনুরুপভাবে তৃনমূল আমলেও 'দ্বিতীয় ডাবলু আনসারী' খ্যাত নেতা সহ পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েকজন নেতা, প্রধান /উপপ্রধানদের অলৌকিক আর্থিক বিকাশ ঘটেছে ।       মঙ্গলকোটে কাটমানি খেয়ে কোটিপতি নেতাদের সম্পকে জানার আগে মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক পেক্ষাপট জানা জরুরি। কেননা রাজনৈতিক পেক্ষাপটের সাথেই লুকিয়ে রয়েছে কাটমানি খাওয়ার নিত্য অভ্যাসগত আয়। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে মঙ্গলকোটে নিরঙ্কুস প্রভাব শাসক দল তৃনমূলের, বলা ভালো, অনুব্রত মন্ডল অনুগামীদের। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের পর ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে হাতেগনা কয়েকজন জনপ্রতিনিধি পাশ করে থাকে। তাও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে, পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা জেলাপরিষদ নয়। যারা জিতেছিলেন বিরোধী হিসাবে, তারাও রাজ্যের উন্নয়নে সামিল হতে দলবদল করেন। ২০১৪ সালে লোকসভায় তৃনমূল লিড পায় ২৪ হাজারের মত। ২০১৬ সালে তৃনমূল প্রার্থী জিতেন ১২ হাজার ভোটে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীশুন্য হয় গোটা ব্লক এলাকা তথা সংশ্লিস্ট মহকুমা।২০১৯ সালে লোকসভায় তৃনমূল লিড পায় ২৯ হাজার মত। তাহলে দেখা যাচ্ছে ২০১১ সাল থেকে এখনও অবধি অর্থ্যাৎ ৮ বছর ক্ষমতায় রয়েছে শাসক শিবির। মূলত অনুব্রত মন্ডল অনুগামী হিসাবে পরিচিতরাই গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলাপরিষদ,লোকসভা সর্বপরি সাংগঠনিক নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন। মাঝখানে ২০১৬ সালে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী এখান থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম পর্যায়ে  এক বছর অনুব্রত মন্ডলের বিরোধিতায় ছিলেন৷ শত চেস্টা করেও গত পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়ন ফর্ম তুলতে পারেননি অনুগামীদের জন্য। ২০১৪ সালে লোকসভার সেসময়কার সাংসদ অনুপম হাজরাও সিদ্দিকুল্লাহের মত লড়াই করতে গেলে বেলাইন হয়ে যান। বর্তমানে অসিত মাল এই কেন্দ্রের সাংসদ৷ যিনি অনুব্রত মন্ডলের অত্যন্ত আস্থাভাজন। 

সাম্প্রতিক সময়ে কাটমানি ইস্যু নিয়ে বিজেপি সেভাবে রাজনৈতিক মাটি শক্ত করতে পারেনি মঙ্গলকোটে। তবে তৃনমূলের বিক্ষুব্দরা বিজেপির পতাকা ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন নেতাদের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে বলে খবর। যেখানে এক ব্লকস্তরের দাপুটে নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী তার উপপ্রধান স্ত্রী কে নিয়ে গ্রামছাড়া হয়েছেন। অঞ্চল তৃনমূল সভাপতি খোকন সেখ লাঠির ঘায়ে জখম হয়েছেন৷ কৈচর ২ নং পঞ্চায়েত উপ প্রধানের বাড়ী ভাঙচুর হয়েছে। ঝিলু ২ নং অঞ্চলে এক গ্রাম কমিটির নেতার বাড়ীতে বোমা পড়েছে। পুলিশও এইসব ঘটনায় অতি সক্রিয়তা দেখাতে গিয়ে উলটে 'জনরোষ' বাড়িয়েছে শাসক দলের তাবিদারী করার জন্য৷ ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সুত্র মারফত প্রকাশ পেয়েছে বেশ কিছু ব্লক নেতার অলৌকিক ভাবে সম্পত্তি বাড়িয়ে নেওয়ার তথ্য। অনেকেই বেনামে প্রচুর সম্পত্তি করেছেন বলে অভিযোগ৷ এমনকি অজয় নদের বালি, ব্লক /পঞ্চায়েতে টেন্ডারে কাটমানি, থানায় ফৌজদারী মামলায় দালালি করে লাখপতি এমনকি কোটিপতি হয়েছেন। বিশেষ সুত্রে দাবি, এইবিধ নেতারা আবার মঙ্গলকোটের লটারির প্রাইজ বিজেতাদের টিকিট অপেক্ষাকৃত কম দামে কিনে নেন। এলাকায় ম্যাসলম্যান খ্যাত নেতাদের কথা না শুনলে আবার মঙ্গলকোট থানার এক নামজাদা বাবু কে দিয়ে থানায় চমকানি দেন। উল্লেখ্য প্রতিদিন মঙ্গলকোটে কয়েক লক্ষ টাকার লটারির টিকিট লেনদেন হয়। সেইসাথে সাপ্তাহিক প্রাইজ হিসাবে ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকার প্রাইজ পড়ে মঙ্গলকোটে ৷ এইসব টিকিট নিয়ে মঙ্গলকোটের নেতারা তাদের ব্লাকমানি কে হোয়াইট মানি করে নেয় বলে অভিযোগ। মঙ্গলকোটের নুতনহাটে এক জমি দালালের মাধ্যমে  কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি কিনে রেখেছেন শাসকদলের বেশকিছু নেতা। মঙ্গলকোটের বক্সিনগর, পদিমপুর বাইপাস, নুতনহাট, বড়বাজার প্রভৃতি এলাকায় রাস্তার ধারে ও মাঠে জমি জায়গা কেনা হয়েছে বলে বিশস্ত সুত্রে প্রকাশ।  বীরভূম লাগোয়া নানুরের বাসাপাড়ায়, সিউড়ি সংলগ্ন পাথরচাপড়ী এমনকি কলকাতার নিউটাউন - রাজারহাটে ফ্লাট/ জায়গা কেনা হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল অবধি মঙ্গলকোটের নুতনহাট সাব রেজেস্ট্রি অফিস, বর্ধমান সদর রেজেস্ট্রি অফিস, সিউড়ি সদর রেজেস্ট্রি অফিসগুলিতে সার্চিং করলে এর প্রমাণ মিলবে বলে জানা গেছে৷ সেইসাথে এইসব এলাকায় সরকারী /বেসরকারী ব্যাংকগুলিতে বিগত কয়েক বছরের আর্থিক লেনদেনের তথ্য নিলে বিপুল বে আইনি অর্থ যোগানের সুত্র মিলতেে পারে। ওই জমি দালালের হাত ধরে সদর মঙ্গলকোট সহ অন্যান্য এলাকার শাসকদলের নেতারা বিপুল সম্পত্তি বেনামে কিনে রেখেছেন বলে অভিযোগ। এইবিধ নেতারা আবার ঝা ঝকঝকে চারচাকা গাড়ী ব্যবহার করেন। স্থানীয় থানার পুলিশ আবার মিথ্যা মামলা সাজিয়ে পুলিশি নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা করে দিয়েছে বলেে অভিিযো গ। কেননা ওই মামলাগুলিতে এফআইআর থেকে চার্জশিটে পুলিশের অতি সক্রিয়তা সামনে এসেছে। যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। 
অপরদিকে রাজ্য বিজেপি নেতা চন্দ্রনাথ মুখার্জীর অভিযোগ - "মঙ্গলকোটে যারা প্রধান /উপপ্রধান পদে রয়েছে তাদের আগে বাড়ী গাড়ী বিষয় সম্পত্তি কি ছিল?  আর এখন কি হয়েছে তা খোঁজখবর নিলেই বোঝা যাবে এরা কত কামিয়েছে দল কে সামনে রেখে"। জানা গেছে, মাছের আরত চালানো, সাইকেল করে রুটি বিক্রি করা ফেরিওয়ালা, বাড়ীতে রাখালগিরি করা,  মাঠে মুনিশ খাটা ব্যক্তিরা আজ  মঙ্গলকোটের কোটিপতি নেতা। মঙ্গলকোটে ওসি পদে একদা থাকা এক প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন - "টানা আট বছর মঙ্গলকোটে যে কয়েকজন ব্লক কমিটি এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের সম্পত্তি গুলির সুত্র দিতে পারে মঙ্গলকোটের নুতনহাটে থাকা ওই জমির দালাল। যার নামে / বেনামে বিভিন্ন সম্পত্তি কেনা হয়েছে। ব্যাংক সহ রেজেস্ট্রি অফিস এমনকি ভূমি সংস্কার দপ্তরে সুনিদিস্ট তথ্য প্রমাণ মিলতে পারে"।এখন দেখার মঙ্গলকোটের কাটমানি খেয়ে কোটিপতি নেতাদের বিরুদ্ধে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিংবা পুলিশ প্রশাসন আদৌও কোন ব্যবস্থা নেয় কিনা?           

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু