শ্রীখণ্ড তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র না হওয়ার পেছনে কে দায়ী ?

 


 মোল্লা জসিমউদ্দিন,

এবারে উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতির আসরে শ্রীখণ্ড তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি।  কোন রাজনৈতিক দল নয়, সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেই  উন্নয়ন  নিয়ে নোংরা রাজনীতির অভিযোগ তুললেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী  শোভনদেব চট্টপাধ্যায়। আজ অর্থাৎ  শুক্রবার দুপুরে পূর্ব বর্ধমান  জেলার কাটোয়া সংলগ্ন দাঁইহাট পুর এলাকার হাউসিং দাস পাড়ায়  ৩৩/১১ কেবি ক্ষমতাসম্পর্ণ বিদ্যুৎ এর  সাবস্টেশন উদঘাটনে  এসে এই উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ টি তুলেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রীর পাশাপাশি  স্থানীয়  বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায়, দাঁইহাট  পুর চেয়ারম্যান  শিশির মন্ডল, জেলাস্তরের বিদ্যুৎ দপ্তরের আধিকারিকরা   ছিলেন এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  । বিদ্যুৎ মন্ত্রী  বলেন - কেন্দ্রীয়  সরকারের রাজনীতির জন্যই কাটোয়ার শ্রীখণ্ড এলাকায় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি মাঝপথে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। উন্নয়ন নিয়ে সদিচ্ছার  অভাব রয়েছে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে। ইতিমধ্যেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার সংস্থা এনটিপিসি তাদের বড় অফিসারদের  এখান থেকে বদলী করিয়েছে। কবে এই প্রকল্পে গতি আসবে তা রাজ্য সরকারের কাছেও অজানা বলে মন্ত্রী  জানান। এমনকি প্রকল্পটি যাতে দ্রুত হয়, সেইব্যাপারে দিল্লিতে এনটিপিসির অফিসেও মুখ্যমন্ত্রী গিয়েছিলেন বলে মন্ত্রীর দাবি।    দেশের মধ্যে বেশকিছু রাজ্যের মত এই রাজ্যে বিদ্যুৎ এর দাম বেশি বলে প্রকান্তরে মেনে নিলেও কবে থেকে দাম কমবে তার নিশ্চয়তা তিনি দেননি। তবে বিদ্যুৎ এর দাম  কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন।দাম নির্ধারণে বিদ্যুৎ দপ্তরের স্বতন্ত্র বোর্ড রয়েছে। তবে রাজ্য সরকার ভুর্তুকি দিয়ে দাম কমাতে পারত অন্যান্য রাজ্যের মত। তবে বিগত বাম সরকারের ঋণের বিপুল বোঝার জন্য এই রাজ্য সরকার তা পারেনি বলে মন্ত্রীর অভিমত।              

উল্লেখ্য  বিগত বাম জমানায় ২০০৬ সালে তৎকালীন বিদ্যুৎ মন্ত্রী  নিরুপম সেনের উদ্যোগে  কাটোয়া শহর সংলগ্ন  শ্রীখণ্ড গ্রামে দুটি মেগা ইউনিটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প করার ঘোষণা করা হয়। প্রায় ১২০০ একর জমির উপর দুটি ইউনিট গড়ার প্রস্তাবনা রাখা হয় সেখানে ।২০০৭-০৮ বর্ষে প্রথম  পর্যায়ে ৫৫৬ একর জমি অধিগৃহীত হয় কোন বাধা ছাড়ায়। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়  পর্যায়ে  জমি অধিগ্রহণ শুরু করতে গেলে জমি আন্দ্রোলনে নামে তৃণমূল ও এসইউসি দল। ২০১১ সালের বিধানসভার  ভোট নিয়ে  বাম সরকার কাটোয়ার শ্রীখন্ডে জমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ধীরে চলো নীতি নেয়। সেবারের ভোটে পালা বদল হলে তৃণমূল সরকার আগ্রহী হয় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প  গড়তে। নির্মাণ কারী সংস্থা রাজ্যের পিসিডিএল এর কাছ থেকে জমির মালিকানা স্বত্ব কেন্দ্রের এনটিপিসি কে  দেওয়া হয়।

 এমনকি ১০০ একর খাস জমি রাজ্যসরকারের তরফে এনটিপিসি কে দেওয়া হয় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য   । এনটিপিসিও জোর কদমে নামে। তারা কাটোয়া বর্ধমান  ন্যারোগেজ রেল আধুনিকরণে ১২০ কোটি টাকা দেয়। যার ফলে এখন এই রেলরুটে বড় লাইনের ট্রেন চলছে। মূলত কয়লা পরিবহনের জন্য এই রেলপথ আধুনিকরণে সচেস্ট হয় সব পক্ষ। প্রকল্পের   আশেপাশে রাস্তা উন্নয়ন, বিদ্যালয়গুলিতে উন্নত শৌচাগার  ব্যবস্থা সহ স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এনটিপিসির তরফে।  দ্বিতীয়  পর্যায়ে ২০১২ সালে জমি অধিগ্রহণ করতে গেলে জমির দাম নিয়ে চাষীদের মতবিরোধ  উঠে আসে। সেইসাথে তৃণমূল ঘেঁষা ঠিকেদারদের  ইমারতি দ্রবের সিন্ডিকেট  নিয়ে বোমাবাজিও হয় এই শ্রীখণ্ড তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প অফিসের সামনে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে রাজ্য বিদ্যুৎ মন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতির অভিযোগ তুললেন তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প না হওয়ার জন্য।এনটিপিসি সুত্রে প্রকাশ, ইতিমধ্যেই  প্রকল্পের পেছনে দুশো কোটির অধিক ইনভেস্ট করেছে। রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথ এমনকি নদীপথে পরিবহনের উদ্যোগ নিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণে রাজ্য সরকারের সেভাবে 'সহযোগিতা' মেলেনি বলে অভিযোগ। প্রকল্পের কাজ না এগুলে মাসের পর মাস শুধু শুধু শ্রীখণ্ড অফিসে বড় অফিসারদের বসিয়ে রাখা যায়না। সেজন্য তারা দামি যন্ত্রপাতিগুলিও সরিয়েছে এখান থেকে। যদি রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে পূর্ন সহযোগিতা করে, তাহলে শ্রীখণ্ড তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথ দেখতে পারে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।                                  

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু