শৈশব ভূমি মঙ্গলকোটে উপেক্ষায় বিদ্রোহী কবি




মোল্লা জসিমউদ্দিন,

কাজি নজরুল ইসলাম কোন এক ধর্মের কবি নয়, নয় কোন রাজনৈতিক দলের। তিনি সবার। তিনি সাম্যের গান গেয়েছেন, বিদ্রোহের তুফান তুলেছেন। কখনো ইসলাম ধর্মের আধ্যাত্মিকতা প্রকাশ পেয়েছে। আবার কখনও বা শ্যামামার অসাধারণ গান লিখেছেন। হ্যা কাঁজি নজরুল ইসলাম শুধু এপার বাংলা, ওপার বাংলার নয়। তিনি সমগ্র বাঙালির কাছে এক মাইলফলক। আজ তাঁর জন্মদিন। অথচ তাঁর একদা শৈশবভূমি মঙ্গলকোটে বরাবরই উপেক্ষিত তিনি। বাম আমলের মত তৃনমূল জামানায় অনাদারে কাটে তাঁর জন্মজয়ন্তী। হাতে গোনা কয়েকটি ক্লাব, সংগঠন সকালবেলায় কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক আর ধুপধুনো দেওয়া ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনা। কবির স্কুল অর্থাৎ মাথরুণ নবীনচন্দ্র শিক্ষা নিকেতনে অবশ্য প্রতিবারেই সাধ্যমতো অনুস্টান করতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, আসানসোলের চুরুলিয়ায় বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম এর জন্ম হলেও পরে চলে আসেন মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামে মামার বাড়ীতে। সেখান থেকে মাথরুণ নবীনচন্দ্র শিক্ষা নিকেতনে তিনি ক্লাস ফোরে ভর্তি হন। স্কুলের রেজিস্টার বুকে তাঁর নাম আছে দুখু মিয়া নামে। প্রসঙ্গত এই স্কুলে তৎকালীন প্রধানশিক্ষক  ছিলেন পল্লিকবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিক মহাশয়। দুখু মিয়ার কয়েকটি স্বরচিত ছড়া দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কুমুদ রঞ্জন মল্লিক। বিদ্রোহী কবির শৈশবের  বছর দুই থেকে তিন সময়কাল কেটেছে  এই মঙ্গলকোটে। এলাকার সাহিত্যানুরাগীদের আক্ষেপ, বাম জমানায় মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে খোলা আকাশের নিচে এক আবক্ষ্য মূর্তি বসানো ছাড়া কিছুই হয়নি মঙ্গলকোটে। সেখানে কুনুর নদীর উপর সেতু নামকরণ হয়েছে পল্লিকবি কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের নামে। আবার অজয় নদের উপর সেতুর নামকরণ হয়েছে বৈষ্ণব কবি লোচন দাসের নামে।  অথচ মঙ্গলকোট ব্লক টি কেন্দ্রীয় সরকারের এমএসডিপি ব্লক হিসাবে ঘোষিত হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি কাজ করার ব্যাপক জায়গা রয়েছে।  অতি সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল পরবর্তী প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে তৃনমূল সুপ্রিমো তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাবেভাবে বুঝিয়ে দেন যে তিনি মুসলিমদের পাশে ছিলেন এবং থাকবেন। এছাড়া এত উন্নয়ন করেও কোন দাম না পাওয়ায় তিনি আক্ষেপও করেন। প্রশ্ন উঠে, প্রায় নয় বছর যেখানে রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় তৃনমূল রয়েছে। সেখানে বিশ্বখ্যাত বিদ্রোহী কবি কে নিয়ে কেন কোন উদ্যোগ নেওয়া হলনা মঙ্গলকোটে?  তাহলে উন্নয়ন গুলি কি শুধু খাতাকলমেই?  সর্বপরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  নিজেকে এত মুসলিম দরদী দেখাচ্ছেন অথচ সংখ্যালঘু ব্লক মঙ্গলকোটের গর্ব কাজি নজরুল ইসলাম এত ব্রাত্য কেন? কোন কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়নি মঙ্গলকোটের বুকে। অপরদিকে  সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলাম এর জন্মজয়ন্তী পালিত হল ভাতারে। মুসলিম    রাষ্ট্রীয় মঞ্চের পক্ষ থেকে বিদ্রোহী কবি কাজি নজরুল ইসলামের মূর্তিতে  মাল্যদান,  হাসপাতালে রোগীদের ফলদান  সহ কবির জীবন চর্চায় পথসভার মাধ্যমে ১১ই জ্যৈষ্ঠ দিনটিকে মহাসমারোহে পালিত করা হলো।রবিবার ভাতার বাজারে মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের রাজ্য সভাপতি ইনামুল হকের উপস্থিতিতে মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের সদস্যরা ভাতার  বাজারে নাসিগ্রাম মোড়ে নজরুলের  মূর্তিতে  মাল্যদান করেন।  এরপর কামারপাড়া মোড়ে এক পথসভার মাধ্যমে কবির জীবনী সকলের কাছে তুলে ধরা হয়। এরপর  ভাতার চিত্তরঞ্জন গ্রামীণ হাসপাতালের  সকল রোগীকে ফলদান করা হয়। মুসলিম  মঞ্চের রাজ্য সভাপতি ইনামুল হক জানিয়েছেন-  বিদ্রোহী কবি কে তার জন্মদিনে সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। তার জীবন সংগ্রামের ইতিহাসকে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌছে দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।এছাড়া ভাতারের বেশকিছু ক্লাব নজরুল জয়ন্তী পালন করে থাকে।      

                                                                                                        

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু