বার এসোসিয়েশন এর ভোট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দিকে তাকিয়ে আইনজীবী মহল


মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

দু মাসের মধ্যেই এই রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবীদের  বার এসোসিয়েশন এর ভোটপর্ব রয়েছে। তবে এবারের ভোট খুবই জমজমাটপূর্ন হতে চলেছে।একমাস পূর্বে পরিস্থিতি ছিল অন্য।বললে অত্যুক্তি হয়না যে শাসকদল ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা একশোভাগ নিশ্চিত ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার। ১৫ আসন বিশিষ্ট বার এসোসিয়েশনে গতবারের ভোটে ১২ জন তৃনমুলপ্রন্থী এবং বাকি ৩ জন বিরোধীদল ঘনিষ্ঠ আইনজীবী। তবে এবারে অন্য হাওয়া বইছে। যেটা একমাস আগে এতটা প্রকট ছিলনা। দুটি বড় ঘটনায় এবার তৃনমূলপ্রন্থী আইনজীবীরা বার এসোসিয়েশনের ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নাও পেতে পারেন। এক,  হাওড়া আদালত কান্ডে কর্মবিরতি নিয়ে 'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল' এর ভূমিকা। দুই, লোকসভার ফলাফলে বাংলায় অভাবনীয় সাফল্য পদ্মশিবিরের। উল্লেখ্য,  'বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ' এর নির্বাচন প্রক্রিয়ার বৈধতা  নিয়ে দিল্লি অবধি জল গড়িয়েছিল। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন আইনজীবী নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে 'বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া' তে মামলা করেছিলেন। তবে তিন সদস্যর সুপ্রিম কোর্টের  অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নির্বাচনটি বৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। তবে এখন পেক্ষাপট ভিন্ন, দ্রুত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদল হচ্ছে। এই বাংলা আর একা জোড়াফুলের নয়, ভাগ বসিয়েছে পদ্মফুল। তাও কেন্দ্রে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে। তাই কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশন এর আসন্ন নির্বাচন ঘিরে ধীরে ধীরে পারদ ক্রমশ উদ্ধমুখী। একমাস পেছনে ফেরা যায় তাহলে দেখা যাবে হাওড়া আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে আইনজীবীদের উপর পুলিশি সন্ত্রাস অভিযোগ তুলে কর্মবিরতি ঘোষণা করা হল বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর পক্ষে। চারদফায় কর্মবিরতি চলে পুরোপুরি একমাস। তবে প্রথম দফার কর্মবিরতিতে যে ঘটনা টি নিয়ে আইনজীবীদের সিংহভাগ রুস্ট হয়েছিলেন। সেটি হল - বীরভূম জেলা তৃনমূল সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন বারোঘন্টার নজরদারি নির্দেশিকা জারী করেছিল। এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে কর্মবিরতির মাঝেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশ বশাকের এজলাসে অনুব্রতের হয়ে মামলা লড়েন বর্ষীয়ান আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টপাধ্যায়। যিনি আবার বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর মেম্বার। অর্থাৎ যারা রাজ্যজুড়ে আদালতগুলিতে কর্মবিরতির ডাক দিল, সেই সংগঠনের সদস্যই আবার কর্মবিরতি ভেঙে মামলা লড়ছেন!  এই ঘটনা টি কেন্দ্র করে সিটি সিভিল কোর্টের ষষ্ঠ তলায় বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর ঘরে শয়ে শয়ে আইনজীবী বিক্ষোভ দেখান এই মর্মে - আমরা পেশাগত আয়ে জলাঞ্জলি দিয়ে কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছি, উনি কেন মামলা লড়তে গেলেন?  বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল একপ্রকার বাধ্য হয়ে শোকজ করে ওই আইনজীবী কে।সিটি সিভিল কোর্টের মূল গেটে মঞ্চ গড়ে অবস্থান বিক্ষোভ চলেছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে - রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমা এবং জেলাস্তরের আদালতে বার এসোসিয়েশন এর পদাধিকারীরা মঞ্চে বার কাউন্সিল কে তুলোধোনা করছেন। 'শাসকদলের তাবেদারি করা যাবেনা, আমাদের কোন রাজনৈতিক দল নেই। আমাদের পরিচয় আমরা আইনজীবী। বার কাউন্সিল কে মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে '। এইবিধ নানান স্লোগান। দফায় দফায় বার কাউন্সিল এর পদাধিকারীদের উপর বিক্ষোভ চালিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের আইনজীবীরা। প্রসঙ্গত  বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিরা প্রত্যেকেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত। কেউ আবার বিধায়কও আছেন। মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নবান্ন তে হঠাৎ ই মুখ্যমন্ত্রী বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিদের আলোচনায় ডাকেন এবং সেইসাথে দলের কোর কমিটিতে রাখার পুরস্কার ঘোষণা করেন বলে প্রকাশ। রাজ্যের প্রায় বার এসোসিয়েশন কে না জানিয়ে তড়িঘড়ি কর্মবিরতি প্রত্যাহার নিয়েও একদল আইনজীবী প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল - আইপিএস রাজীব কুমার কে জামিনের আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার জন্যই এই কর্মবিরতি প্রত্যাহার। আমরা দেখেছি, গত ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এর ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশিকা জারী করার পর আক্রান্ত আইনজীবীদের পক্ষে হাওড়া জেলা বার এসোসিয়েশন সাংবাদিক সম্মেলনে জানায় - বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল কোন কিছুতেই মাথা নত করবেনা এটা আমরা আশা করি। তাহলে ঘটনা পরম্পরাগুলি  দেখে বোঝা যাচ্ছে - হাওড়া কান্ডে সারারাজ্য জুড়ে কর্মবিরতি নিয়ে আইনজীবীরা তৃনমূলপ্রন্থী আইনজীবীদের উপর কিরুপ ক্ষুব্ধ?  এমনকি রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল সহ সমস্ত জেলা আদালত, মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবীদের গনইস্তফা দেওয়ার জোরালো দাবিও উঠেছিল। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে দুমাসের মধ্যেই রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত অর্থাৎ কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশন এর নির্বাচন হচ্ছে। কতটা জমজমাট হতে চলেছে তার পূর্বাভাস এখন থেকেই কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবের মধ্যে চর্চা শুরু হয়ে গেছে। গত ২৩ মে লোকসভার ফলাফল ঘোষণায় সারাদেশের পাশাপাশি এই রাজ্যের বিজেপির অলৌকিক আসন এসেছে। সেখানে ফাকা ময়দান যে তৃনমূলের হাতে নেই সেটাও স্পষ্ট.....                                                                                                                                                                                                                                                                                                                                    

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু