বাংলায় পদ্মফুলের উথান অক্সিজেন দিল হাওড়া কান্ডে


মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

সারাদেশে মোদীঝড় নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। সেইসাথে বাংলার রাজনীতিতে 'বিরোধী শুন্য ' রাজনৈতিক পরিকাঠামো কে ভেঙে খান খান করে দিয়েছে৷ গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে যে গন্ডগোলের  সুত্রপাত ঘটেছিল। সেই গন্ডগোলের রেশ সারারাজ্যে একমাস কর্মবিরতির মাধ্যমে কাটিয়ে ছিলেন আইনজীবিরা। ইতিমধ্যেই গত ২২ মে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সম্মাদার এবং বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায় এর ডিভিশন বেঞ্চ হাওয়া কান্ড নিয়ে একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারী করে থাকে। প্রথমত, রাজ্যের যেকোনো আদালতে পুলিশ যখন তখন  ঢুকতে পারবেনা। এক্ষেত্রে মহকুমা আদালতে এসিজেম, জেলা আদালতে জেলাজাজ এবং হাইকোর্টে রেজিস্ট্রার জেনারেল এর অনুমতিক্রমে আদালতে প্রবেশ করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, হাওড়া পুলিশ কমিশনার সহ সাতজন পুলিশ অফিসার ক্লোজ থাকবেন আগামী ২৬ শে আগস্ট পর্যন্ত। এঁরা হাওড়া পুলিশে কোন কাজ করতে পারবেনা। সেইসাথে গত ২৪ এপ্রিল থেকে ২৬ এপ্রিল ১১ টি এফআইআর কপিতে পুলিশ কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। তৃতীয়ত তথা গুরত্বপূর্ণ নির্দেশ টি হল, অবসারপ্রাপ্ত বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্তের নেতৃত্বে এক বিচার বিভাগীয় কমিশন গড়া। এইবিধ কলকাতা হাইকোর্টের রায়দান ঘটলেও গত ২২ মে হাইকোর্টের কোনায় কোনায় আইনজীবিদের মধ্যে আলোচনা চলছিল - লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে আক্রান্ত আইনজীবীদের সুবিচার পাবার ভবিষ্যৎ।কেন এই লোকসভার ফলাফলের প্রসঙ্গ আইনজীবীদের সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে?  ঘটনার দিন এবং ঘটনার পরে রাজ্যসরকারের সন্দেহজনক অবস্থানই  আক্রান্ত আইনজীবীদের বেশি বেশি সন্দিহান করে তুলেছে।ঘটনাপ্রবাহ গুলি একটু পর্য্যালোচনা করলেই  তা বোঝা যাবে। গত ২৪ এপ্রিল সকাল দশটায় হাওড়া জেলা আদালতে যখন পুলিশ দলবল নিয়ে ঢুকলো। তখন অর্থাৎ বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ হাওড়া সিজেএম সদর থানার ওসি কে বিষয় টি সম্পকে অবগত হওয়ার জন্য এজলাসে দেখা করতে বললে, হাওড়া সদর থানার ওসি তা এড়িয়ে যান। আবার এগারোটা পনেরো মিনিটে ডিস্ট্রিক্ট জাজ পুলিশ কমিশনার কে তলব করলেও পুলিশের সেই একই নীরব অবস্থান দেখা যায়। অথচ বিকেলে হাওড়ার এক প্রভাবশালী নেতার আদালত সফরে এদের কে ডাইনে বাঁয়ে দেখা যায়। ২৯ এপ্রিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে স্বতঃস্ফূর্ত মামলা রুজু হওয়ার পর ১০ মে এর মধ্যে সব পক্ষ কে  হলফনামা  জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া ছিল।এখানেও আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য কোন হলফনামা জমা দেয়নি পুলিশ। আদালতের প্রতি ক্রমাগত অবহেলার পেছনে পুলিশ কেন এত বেপরোয়া ছিল?  এইবিধ নানান প্রশ্নচিহ্ন হাইকোর্টের প্রতিটি অলিন্দে আলোচিত হয়। তাহলে রাজ্য প্রশাসনের কি নীরব সম্মতি ছিল। কলকাতা হাইকোর্ট যখন অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার দের পেছনে রাজ্যের কি অভিমত জানতে চেয়েছিল। সেখানেও হাইকোর্ট কে কোন সুস্পষ্ট অভিমত দেয়নি রাজ্য। উল্লেখ্য মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে নবান্ন তে হঠাৎ ই মুখ্যমন্ত্রী সদ্য নির্বাচিত বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডাকেন। সেখানে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে সক্রিয় হওয়ার বার্তা দেন। ঘটনা গুলি পর্য্যালোচনা করলে বোঝা যাচ্ছে রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই অদ্ভুতভাবে নীরব। তাও রাজ্য প্রশাসনের প্রধান কার্যালয় নবান্ন থেকে মাত্র তিন কিমি দূরে থাকা হাওড়া জেলা আদালতে টানা ন ঘন্টা তান্ডবলীলা চালালো পুলিশ? এইরূপ নানান তথ্য, যুক্তি আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনায় উঠে এসেছে। লোকসভা নির্বাচনে ফলাফলে তৃণমূল খুব ভালো ফল করলে হাওড়া কান্ড ধামাচাপা পড়ে যেত বলে  আইনজীবীরা মনে করছেন। যেভাবে সারাদেশের পাশাপাশি এই রাজ্যে জোড়া ফুল কে পদ্মফুল নজরকাড়া ফলাফল এনেছে। তাতে হাওড়া কান্ডে আক্রান্ত আইনজীবীরা সুবিচারের দাবিতে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন তা বলা যায়।                                                                                                                                                                                                                                                                                             

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু