রাজ্যে বিচারপ্রার্থীরা ২ মে অবধি দুর্ভোগের শিকার হবেন


মোল্লা জসিমউদ্দিন - টিপু, 

সোমবার দুপুরে রাজ্য বার কাউন্সিল এর জরুরি বৈঠকে হাওড়া কান্ডে কর্মবিরতি নিয়ে জট কাটলো না। উল্টে আগামী ২ রা মে পর্যন্ত তা বহাল রাখার সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাশও হয়ে গেল। অর্থাৎ গত বুধবার অর্থাৎ ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে যে সংঘর্ষ পুলিশ বনাম আইনজীবীদের মধ্যে হয়েছিল। তার রেশ কমছে না, উল্টে ক্রমশ বেড়েই চলেছে ভোগান্তি । ইতিমধ্যেই টানা ছয়দিন ধরে রাজ্যের সবকটি আদালতে আইনজীবীদের সার্বিকভাবে কর্মবিরতি চলেছে এবং সেইসাথে আরও তিনদিন চলবে উকিলবাবুদের এই কর্মসূচি। অর্থাৎ টানা নয়দিনের সময়সীমায় আদালত একপ্রকার বিচারপ্রার্থীদের কাছে বন্ধ রইলো। এতে চরম বিপাকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার বিচারপ্রার্থীরা। এমনতেই মামলার পাহাড় ক্রমশ বাড়ছে বিভিন্ন আদালতের বুকে। এক বিচারপ্রার্থী জানান - "কর্মবিরতি ছাড়াও অন্যভাবে প্রতিবাদ উকিলবাবুরা জানাতে পারতেন। এর ফলে আমরা মামলায় ডেটের পর ডেট  পাচ্ছি, যারফলে সমস্যা আরও বাড়ছে আমাদের  "। জানা গেছে,  গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ী রাখা নিয়ে তুমুল মারপিট হয় পুলিশ বনাম আইনজীবীদের মধ্যে।ঘটনার দিনেই রাজ্যের সব আদালতের আইনজীবীরা ঘটনার প্রতিবাদে কর্মবিরতি ঘোষণা করে দেন। সেদিনই কলকাতা হাইকোর্টের তরফে হাওড়া জেলাজাজের কাছে রিপোর্ট তলব করে। বৃহস্পতিবার তা পাঠিয়ে দেন হাওড়া জেলাজাজ৷ শুক্রবার বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিরা হাওড়া জেলা আদালতে যায়। বার এসোসিয়েশনের পাশাপাশি জেলাজাজের চেম্বারে বৈঠক হয়। বার কাউন্সিল এর পক্ষে আহত ছাব্বিশ জন আইনজীবীদের চিকিৎসার জন্য কুড়ি হাজার টাকা সাহায্য করে। তবে পরিস্কারভাবে হাওড়া জেলা বার এসোসিয়েশন জানিয়ে দেয় - হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের আওতায় চার আইপিএসের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজু করতে হবে, সাসপেন্ড করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে। এছাড়া রাজ্য সরকারের কাছে আহত পিছু পাঁচ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ অর্থাৎ এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকা উকিলদের দিতে হবে। এইরূপ পরিস্থিতির মাঝে হাওড়া জেলা আদালতের পনেরোজন  সরকারি উকিল (পিপি) দের মধ্যে এগারোজন ইস্তফাপত্র দেয় গত বুধবারের পুলিশি সন্ত্রাস অভিযোগ তুলে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সাথে আলাপ আলোচনায় বসেন বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল এর প্রতিনিধিরা। সেখানে এখনও অবধি কোন সমাধান সুত্র বের হয়নি বলে প্রকাশ। আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। কেননা ইতিমধ্যেই তাঁর দপ্তর ( রেজিস্ট্রার জেলারেল)  হাওড়া জেলা আদালতের জেলাজাজের কাছে রিপোর্ট নিয়েছে৷ সেইসাথে আইনজীবীদের সাথে দফায় দফায় তিনি বসেছেন।পুলিশ বনাম আইনজীবীদের এহেন গন্ডগোলে সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। এটি শুধু কোন নিদিষ্ট আদালতের কর্মবিরতি নয়। সমগ্র রাজ্য জুড়ে চলছে। এই কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছে  কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনও। কেননা অবাধ নির্বাচনের লক্ষে পেন্ডিং ওয়ারেন্ট গুলি কার্যকর করার যে নির্দেশিকা দেয়। তার বাস্তব প্রতিফলন হচ্ছেনা আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকার জন্য। এই জটিল পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার কে কোন সদর্থক ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। যেখানে গোটা রাজ্যের প্রায় মানুষ  আদালতে কর্মবিরতিতে কমবেশি বিপযস্ত হচ্ছেন সেখানে রাজ্য প্রশাসন চুপ কেন?  সে নিয়েও উঠেছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। গত ২৪ এপ্রিল হাওড়া জেলা আদালতে গাড়ীর পার্কিং নিয়ে রণক্ষেত্র রুপ নিয়েছিল গোটা এলাকা। আদালত চত্বরে তো বটেই বিভিন্ন বিচারকের এজলাসেও তান্ডবলীলা দেখা যায় পুলিশের। এমনকি এক মহিলা আইনজীবী কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে দেখা যায় এক সিভিক পুলিশ কে। ঘটনার প্রায় ভিডিওগ্রাপি দেখা যায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।সেইসাথে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় এইসব ভিডিও। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন কেন অভিযুক্ত পুলিশঅফিসার দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। কাটোয়া মহকুমা আদালতের আইনজীবী অনিন্দ চট্টরাজ বলেন - আমাদের সহকর্মীরা রাস্তায় মার খেয়ে রক্তাক্ত হবে, আর আমরা বসে থাকবো?                                                                                                                                                                                                                                             

    

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু