অপরাধের সেরা ঠিকানা মঙ্গলকোট

মোল্লা  জসিমউদ্দিন , 

ঘটনা ১,  মাস কয়েক পূর্বে মঙ্গলকোটের লাখুরিয়া এলাকায় অজয় নদের চরে মিনা বিবি নামে এক গৃহবধূর বালিচাপা দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনা ২,  মঙ্গলকোট থানার এক কিমির মধ্যে থাকা নুতনহাট বাইপাসে ভোলাই সেখ নামে এক গ্রামবাসীর বীভৎস দেহ দিনের আলোয় উদ্ধার হয়। ঘটনা ৩,  মঙ্গলকোটের বকুলিয়ায় বালির ঘাট দখল ঘিরে বোমায় হত হয় এক স্থানীয় বাসিন্দা। এতো শুধু খুনের খতিয়ানের নমুনামাত্র। চুরি - ছিনতাই -  রাহাজানি - বোমাবাজি - লুটপাট  বিষয়ক ঘটনা গুলি মঙ্গলকোট কে সেই আগের মতনই রেখেছে। বিদ্যুৎ চুরিতে চলতি আর্থিক বর্ষে এই ব্লকে লুট হয়েছে ২৩ কোটি সরকারি অর্থ। বালি চুরিতে আরও কয়েক কদম এগিয়ে মঙ্গলকোট। যে বিপুল রাজস্ব আদায় হয়েছে, তার বেশিরভাগ বালিঘাটে টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীরা পজিশন পাইনি বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে। পুলিশ দেখলে সাধারণত চোর ডাকাতরা পালিয়ে যায়। তবে মঙ্গলকোটের ক্ষেত্রে রসায়নটা আলাদা বলে স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ । বেলা দশটা বাঁজলে মঙ্গলকোট থানায়  ' হাইপ্রোফাইল' মার্ডার কেসের অভিযুক্তেরা কুড়ি থেকে ত্রিশ জন নিয়ে ঢুকে পড়েন।এমনকি পুলিশ কোয়াটারেও তাদের অবাধ গতিবিধি বলে অভিযোগ । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মী  বলেন -  "অজয় নদের বালিঘাটের প্রাত্যহিক হিসাবপত্র ও বিভিন্ন ফৌজদারি মামলায় তদন্তে সুবিধা করতে এরা আসেন "!   থানায় যেসব জায়গায় সিসিটিভি থাকার কথা, সেইসব জায়গায় সিসিটিভির কোন কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। তাই মঙ্গলকোট ব্লক এলাকা জুড়ে অপরাধ বেড়ে চললেও, থানা অফিসেই এহেন হাল থাকার জন্য মঙ্গলকোট ক্রমশ অপরাধীদের কাছে অবাধ মুক্তাঙ্গন হয়ে উঠছে।   বিগত তিনবছর ধরে  মঙ্গলকোটের বুইচি মোড়, কৈচর হাটতলা, পুরাতনহাট, পদিমপুর বাইপাস, চাণক, জয়পুর, প্রভৃতি এলাকায় মিস্টির দোকানে, মাঠের সাবমারসেবল পাম্প, সাইকেল, মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। থানায় অভিযোগ জানাতে এলে, উল্টে অভিযোগগ্রহনের জিডি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।    প্রতিবছর ধান উঠলে সেইসব রাস্তার ধারে জমিগুলিতে জুয়াখেলা সেইসাথে অশ্লীল লেটোর ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মঙ্গলকোট থানার তিন কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে কয়েকমাস ধরে এহেন টাকা লুট করার মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। যারফলে চুরি ছিনতাই তো বটেই  অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে পারিবারিক অশান্তি ক্রমশ বেড়েছে। ধানের প্রায় অর্থ লুট হয়ে যায় এইবিধ জুয়া মেলায়। রাজনৈতিক কিংবা অরাজনৈতিক খুন, সেইসাথে চুরি ছিনতাই রাহাজানি বোমাবাজি একটুও কমেনি মঙ্গলকোটে। বর্তমানে অজয় নদের বালিলুট শিল্পাঞ্চল বর্ধমানের বেআইনি   কয়লা সিন্ডিকেটের মত অবস্থান করছে।  শাসকদলের স্থানীয় অঞ্চলস্তরের প্রায় নেতারা ডাম্পার গাড়ি - জেসিপি মেশিন  কিনে স্বতন্ত্রভাবে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে।  এই দলে পঞ্চাশের বেশি ভাড়াটে দুস্কৃতি কাজ করে। তারাও নানা অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়ে। আবার অন্যদিকে অজয় - কুনুর নদীর উপকূলে অত্যন্ত গোপনে পোস্ত চাষাবাদ চলে। কাঁচা পোস্ত স্থানীয় চাষীরা পেলেও পোস্তগাছের আঁঠা নিতে  আসে  মাদক কারবারীদের দলবল।   গত তিনবছরে দশের বেশি ব্যক্তিত কাছে গড়ে কুড়ি কেজির বেশি গাঁজা উদ্ধার দেখিয়েছে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ।  তাহলে গাঁজা পাচারকারীদের অবাধ মুক্তাঞ্চল যে মঙ্গলকোট তা পুলিশি পরিসখ্যন দেখলেই বোঝা যায়। যদিও শাসকদলের বিপক্ষ শিবিরের দাবি - মাদক মামলা মূলত দেওয়া হয়েছে  জামিন তাড়াতাড়ি যাতে না পায় সেজন্য। এইবিধ নানান অভিযোগে সরগরম মঙ্গলকোটের বিভিন্ন এলাকা। পুলিশে অভিযোগ জানাতে এসে থানার সামনে থাকা এক দলীয় অফিসে মারধরের শিকারও হতে হয়েছে অনেককেই। যদিও এইরুপ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়ে পুলিশের তরফে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান - ২০১০ সালে ৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলকোট থানায় আলাউদ্দিন সেখ থানায় অভিযোগ জানিয়ে ফেরার পথে ডাবলু আনসারীর দলবলের হাতে খুন হয়েছিল, আবার ২০০৮ সালে ৮ আগস্ট অনুরুপ কায়দায় সাইফুল মুন্সি খুন হয়েছিল সেই থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে।বাম জমানায় ঝিলু ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তপন ঘোষ থানা চত্বরেই ব্যাপক মারধর খেয়েছিল ডাবলু আনসারীর লোকেদের হাতে। তাই রাজ্যে পালাবদল ঘটলেও সেই একই ট্রাডিশন বজায় রয়েছে মঙ্গলকোটের বুকে। অপরাধ যেমন বেড়েছে, ঠিক তেমনি অপরাধে যুক্তদের প্রতি পুলিশের একাংশের মদতদান একফোঁটাও কমেনি নুতন সরকারের আমলেও।                          

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু