কোটি কোটির বিদ্যুৎ - বালি চুরি মঙ্গলকোটে, উঠছে প্রশ্নচিহ্ন



মোল্লা জসিমউদ্দিন,

হিংস্বা হানাহানিতে রক্তাক্ত মঙ্গলকোটে নবতম সংযোজন কোটি কোটি সরকারি অর্থ চুরি। তবে নগদ নয়, ঘুরপথে চুরি। চলতি আর্থিক বর্ষে মঙ্গলকোটের নুতনহাট সাব স্টেশন হতে ২২ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার মত বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে বলে দপ্তরের হিসাবে উঠে এসেছে। আবার মঙ্গলকোটে অজয় নদে বালির রাজস্ব বাবদ ২০ কোটির বেশি অর্থ আদায় হলেও সেটি   আদৌও ঠিক থাকবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কেননা যারা বালিঘাটের জন্য অগ্রিম অর্থ দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহন করেছিল। তাদের সেইসব বালিঘাট গুলি বেশিরভাগই চালু হয়নি। উল্টে সেইসব ঘাটে স্থানীয় পুলিশের একাংশের মদতে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বালির ঘাট দখল করে বসে আছেন!  এইরুপ নানান অভিযোগ উঠেছে মঙ্গলকোটে। শুধু বিদ্যুৎ কিংবা বালি নয়, নুতনহাটে গাড়ী চুরি, বুইচির মোড়ে দোকানে চুরি, পশ্চিম মঙ্গলকোটে সাইকেল কিংবা সাবমারসেবল পাম্প চুরি। এমনকি থানার পাশে থাকা পদিমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জল তোলার পাম্প মেশিন পর্যন্ত চুরি হয়েছে। এককথায় বলা যায় চোরেদের অবাধ মুক্তাঙ্গন হিসাবে মঙ্গলকোট ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে জেলার অন্য থানা এলাকা থেকে। জরুরি পরিষেবা প্রদানে বিদ্যুৎ বিভাগ হল অন্যতম। চলতি আর্থিক বর্ষে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২০০ কোটির কাছাকাছি বিদ্যুৎ চুরি হয়েছে। বিদ্যুৎ চুরিতে প্রথমসারিতে   চলে এসেছে মঙ্গলকোট। ২৩ কোটির বিদ্যুৎ হাপিস হয়ে গেছে এই ব্লকে। তাও আউশগ্রামের গুসকারা সাবস্টেশন থেকে পশ্চিম মঙ্গলকোটের চারটি অঞ্চল অর্থাৎ পঞ্চাশের কাছাকাছি গ্রাম   নুতনহাট সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা পায়না। তাহলে বিদ্যুৎ চুরিতে আরও অতিরিক্ত ১০ কোটি যোগ হত মঙ্গলকোটের সাথে!  কেন এত বিপুল পরিমানের বিদ্যুৎ চুরি মঙ্গলকোটে?  নুতনহাট সাব স্টেশনের কর্তারা মুখ খুলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মী বলেন - " শুধুমাত্র বাড়ীতে বিদ্যুৎ চুরি করে এত কোটি কোটি টাকা যায়না, এটা বিভিন্ন মাঠের সাবমারসেবল, বিভিন্ন বাজারে তেলকল, আইসক্রিম  ফাক্টরি,   ইটভাঁটা,    প্রভৃতি জায়গায় চুরি বেশি হয় "। তাহলে অভিযান কেন নয়?  এই প্রশ্ন করতেই ওই বিদ্যুৎ কর্মীদের অভিযোগ - পুলিশ ছাড়া এইসব অভিযানে গেলে মারধর খেতে হয়, পুলিশের একাংশের সাথে ওদের যা সম্পর্ক সেখানে আমরা সাহস পায়না অভিযানে "। জানা গেছে, পঞ্চায়েত সমিতির এক বিদায়ী পদাধিকারী নিগন এলাকায় বেশকয়েকটি মৌজায় নামে বেনামে দশের বেশি সাবমারসেবল চালায় সারা বছর ধরে। সেগুলি বেশিরভাগই অবৈধ বলে স্থানীয়দের দাবি। শুধু নিগন নয় মঙ্গলকোট ব্লকজুড়ে হাজারের বেশি সাবমারসেবল আছে এইধরনের। যেগুলি সাময়িক অনুমতি নিয়ে সারাবছর চলে। কৈচর এলাকায় শাসকদলের ব্লক নেতার অনুগামী হিসাবে পরিচিতদের গ্রিল ফাক্টরি রয়েছে যেখানে বিদ্যুৎ চুরি চলে বলে অভিযোগ। উল্লেখ্য ২০০৯ সালে তৎকালীন জেলাপরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ ফাল্গুনী মুখার্জি খুনে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনার পরিণতি হিসাবে প্রকাশ্যে এসেছিল   নিগন এলাকায় অবৈধ বিদ্যুৎ চুরির অভিযান  ।    বাড়ীগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ মিটার ঠিকঠাক আছে কিনা , তার থেকে বেশি বিভিন্ন মাঠের সাবমারসেবলগুলির বৈধতা, সময়সীমা দেখা উচিত। সেইসাথে বিভিন্ন ইটভাটায় বিদ্যুতের ব্যবহার পরখ করলেই বিদ্যুৎ চুরি অনেকটাই রোখা যাবে।    এখন প্রশ্ন বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?  কেননা বিরোধীশুন্য মঙ্গলকোটে শাসকদলের অনুগামীদের কাছে অভিযান চালানো দুস্কর স্থানীয় অফিসের কাছে। কোন সক্রিয়তা দেখাতে গেলে অফিস ভাঙ্গচুরের পাশাপাশি দপ্তর কর্মীদের মারধর করার ঘটনাও ঘটেছে। ২৩ কোটি অর্থের বিদ্যুৎ চুরির অর্থ হয়তো আর উঠে আসবেনা। তবে জেলাস্তরে বিদ্যুৎ দপ্তর  কড়া ভূমিকা নিলে ভবিষ্যতে কোটি কোটি অর্থ চুরি রোধে  বাঁচবে, এটা বলা যায়। অপরদিকে বিদ্যুতের পাশাপাশি বালিচুরিতেও এগিয়ে মঙ্গলকোট। চলতি আর্থিক বর্ষে ২০ কোটি সরকারী রাজস্ব আদায় হয়েছে অজয় নদের বালিঘাট ঘিরে। মূলত বিভিন্ন ঘাটগুলির টেন্ডারে অগ্রিম লিজ নেওয়া এই অর্থরাশি। যারা ঘাট পেয়েছে, তাদের সিংহভাগই তাদের বালিঘাটে 'পজিশন' পাইনি বলে অভিযোগ। উল্টে মঙ্গলকোট থানার পুলিশের একাংশের মদতে বেশকিছু প্রভাবশালী নেতা বালিঘাটগুলি জবরদখল করে বসে আছে, তাও সশস্ত্র বাহিনী পাহাড়া দিয়ে।মঙ্গলকোট  থানায় এবেলা ওবেলা  যাওয়া মঙ্গলকোট সদর এলাকার এক উঠতি নেতা কোগ্রাম ও সাগিরার মাঝামাঝি একটি বালিঘাট যেমন দখল করে রয়েছেন। ভূমি সংস্কার দপ্তরে বিষয়টি নিয়ে ক্রমশ মাথাব্যথা হয়ে উঠেছে বিষয়টি।হাইকোর্টের এক আইনজীবী জানান - যারা সরকারিভাবে টেন্ডারে অংশগ্রহন করে লিজ বাবদ টাকা জমা দিয়েছেন বালিঘাটের জন্য, তারা যদি বালিঘাটে দখল না পান তাহলে মামলা করলে ভুমি সংস্কার দপ্তর ওই অর্থ সুদসহ দিতে বাধ্য "।  শুধু বিদ্যুৎ কিংবা বালি চুরি নয়। গাড়ী চুরি, দোকানে চুরি, বিদ্যালয়ে পাম্প মেশিন চুরি  সবেতেই এগিয়ে মঙ্গলকোট। উল্লেখ্য কাটোয়া মহকুমা আদালতে আইনি পরিষেবা কেন্দ্রের সম্পাদক সুশোভন মুখার্জির মোটরবাইক কৈচর বাজারে দিনেদুপুরে মাসকয়েক পূর্বে চুরি হয়েছিল। তার কিনারা পুলিশ এখনও করতে পারেনি। উল্টে অনেক চুরি যাওয়া জিনিশের মালিক থানায় জিডি করতে গেলে হয়রানি এমনকি অভিযোগপত্র গ্রহণ না নেওয়ার  অভিযোগ এনেছেন। যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।                                                                                           

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু