আহমেদপুর থেকে কাটোয়া কিংবা কাটোয়া থেকে বর্ধমান রেলরুটে ট্রেনসংখ্যা একটি,ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রী মহলে

 মোল্লা জসিমউদ্দিন ,


গত ১২ জানুয়ারি কাটোয়া থেকে বর্ধমানগামী বড়রেলে ট্রেন চালুতে যে চরম উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল চারটি জেলার একাংশ এলাকাজুড়ে। তা সময়ের ব্যবধানে যাত্রী ক্ষোভে পরিণত হচ্ছে। কাটোয়া থেকে বর্ধমান ৫২ কিমি রেলপথে ট্রেন চলছে মাত্র ১ টি, তাও অবেলায়। গত রবিবার কাটোয়া স্টেশন চত্বরে এই রেললাইন সহ আরেক নুতন বড়রেল আহমেদপুর কাটোয়ার নিত্যযাত্রীদের এক সংগঠন প্রতিবাদসভার আয়োজন করে থাকে। এবং সেইসাথে কাটোয়া স্টেশনমাস্টার কে ৬ জোড়া ট্রেন উভয় লাইনে চালুর দাবিতে স্মারকলিপিও দেয়। বৃটিশ আমলে গড়া কাটোয়া থেকে বর্ধমান এবং কাটোয়া থেকে আহমেদপুর   ন্যারোগেজ রেলপথ চলতি বছরে বডগেজে রুপান্তরিত হয়েছে। যদিও ২০১২ সালে কাটোয়া থেকে বর্ধমান রেলপথের   অর্ধেকটা   অর্থাৎ বলগনা থেকে বর্ধমান বড়রেলে পাঁচজোড়া ট্রেন যাতায়াত শুরু করেছে। ২০১৭ সালের শেষের দিকে কাটোয়া শহর সংলগ্ন শ্রীখণ্ড থেকে বর্ধমান ট্রেন চালু হয়েছিল। তবে একটিই ট্রেন সম্বল এই রেলরুটের। চলতি বছরে ১২ জানুয়ারী কাটোয়ায় বিকেল চারটেয় সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেনটি শুরু হয়,  বর্ধমান স্টেশন পৌছায় বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। উল্লেখ্য এই ট্রেনটি আবার বর্ধমানে দুপুর দুটোয় ছেড়ে সাড়ে তিনটেয় পৌছায় কাটোয়ায়, বিকেল চারটেতে বর্ধমান যাবার    জন্য।    পড়ন্ত বেলায় এই অসময়ে  যাত্রীসংখ্যা হাতেগোনা। অনুরুপভাবে চলতি বছরে ২৪ মে   বীরভূমের আহমেদপুর থেকে ৫৮ কিমি রেলপথে কাটোয়াগামী বড়ট্রেন চালু হয়। সেই ট্রেন সংখ্যা মাত্র ১ টি রেখে। এই দুই শতাব্দীপ্রাচীন রেলপথ ঘিরে স্বপ্ন ছিল অনেক।নানান বিখ্যাত লোকেদের স্মৃতি  রয়েছে এই দুটি রেলপথ ঘিরে। সেই 'হাটেবাজারে'র তারাশঙ্করের কথা হোক, কিংবা পল্লিকবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের স্মৃতি হোক। যেদিন শেষ ন্যারোগেজ ট্রেন চলেছিল এই দুটি রেলপথে। সেদিনগুলি ট্রেনের মধ্যে -  ছাদে যাত্রীময় হয়ে উঠেছিল। রাজ্য বিচারবিভাগের রেজিস্টার ( ম্যারেজ)  মৃদূল হালদার তৎকালীন কাটোয়া  মহকুমাশাসক থাকার সময় নস্টালজিক হয়ে সেই ছোট ট্রেনে চেপেছিলেন ইতিহাসের সাক্ষী হতে। রাস্তার দুধারে বিপুল জনসমাগম ঘটেছিল আবেগ কে পুজি রেখে। ঠিক এহেন রেলপথে বড় ট্রেন যাতায়াত করছে মাত্র ১ টি, তাও বিকেল বেলায়। শুধুমাত্র পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া কিংবা সদর বর্ধমান মহকুমা এলাকা নয়। সীমান্তবর্তী নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমের একাংশ এলাকার মানুষজন এই রেলপথে যাত্রী সুবিধা নিয়ে বিস্তর স্বপ্ন দেখেছে। কাটোয়া থেকে বর্ধমান    বাসে সময় লাগে তিনঘন্টার বেশি, আবার ভাড়াটা পঞ্চাশ টাকার মত। সেইজায়গায় ট্রেনে সময় দেড়ঘন্টা, ভাড়াটাও কম। তাই মাত্র ১ টি ট্রেন যাতায়াতে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে যাত্রীমহলে। অনুরুপ ক্ষোভ আহমেদপুর কাটোয়া রেলরুটেও, এখানেও সেই ট্রেনের সংখ্যা মাত্র ১ টি। ঠিক এইরকম পেক্ষাপটে গত রবিবার এই দুটি রেলরুটের নিত্যযাত্রীরা কাটোয়া রেলস্টেশন চত্বরে সভা করে স্টেশনমাস্টার ছয়জোড়া ট্রেনের দাবিতে স্মারকলিপি দেন। ৭ নং প্লাটফর্মে টিকিট কাউন্টার দাবিটিও রয়েছে সেখানে। কেননা এই দুটি রেলপথের যাত্রীদের টিকিট কাটতে গেলে স্টেশনের ওভারব্রিজ দিয়ে যেতে হয়। প্রায়শ বিনা টিকিটের যাত্রী বলে আর্থিক জরিমানা সহ হয়রানির শিকার হতে হয়। বিষয়টি নিয়ে বারবার কাটোয়ার বর্ষীয়ান বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টপাধ্যায় কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী কে লিখিতভাবে পাঠিয়েছেন। গত ৩ এপ্রিল অবশ্য কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল এই বিধায়ক কে অবগত করেছেন যে, বিষয়টি রেলের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সিরিয়াস ভাবে দেখছে। এই আশ্বাসের মাঝেই শ্যামল মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ পাল, পুলকেশ ভট্টাচার্য, কবিরুল ইসলামদের মত যাত্রীদের প্রশ্ন, সাতমাস পেরিয়ে গিয়েও যদি ট্রেন সংখ্যা না বাড়ে, সেখানে রেলের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়। এই রেলপথ দ্রুত চালু না যাতে না হয়, সেই ব্যাপারে নানামহল সক্রিয় ছিল বলে যাত্রীদের একাংশের দাবি। বাসমালিকদের ভূমিকা নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছেন। এই রেলপথ পুরোদমে চালু হলে উপকৃত হবে বিভিন্ন শিল্পকাজ। কাটোয়া বর্ধমান রেলরুটের মধ্যে পড়ছে মঙ্গলকোটের বাজার বনকাপাসি। এখানকার শোলা শিল্প বিশ্বখ্যাত। বেশ কয়েকজন রাস্ট্রপ্রতি পুরস্কার পেয়েছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পুজোর কাজে ব্যবহৃত শোলার নানান নিপুণকাজ। তাই এই রেলরুটে ট্রেন বাড়লে উপকার পাবে মঙ্গলকোটের শোলাশিল্পীরাও।                                                                    

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

স্বরুপনগরের ২৬ কিমি সড়কপথ সংস্কার হল

পাথরচাপরির দাতাবাবার টানে....

কোতলপুরে নেতাজির জন্মদিনে আসছেন ব্রাত্য বসু